Short stories about that people we have forgotten,but they are very important in history-ছোট্ট গল্প সেইসব মানুষদের নিয়ে যাদের আমরা ভুলে গেছি কিন্তু তারা ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ


ছোট্ট গল্প সেইসব মানুষদের নিয়ে যাদের আমরা ভুলে গেছি কিন্তু তারা ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ: 



হ্যাঁ সত্যিই ছোট্ট কিছু গল্পই আজকে বলবো। আসলে আজকে যাদের কথা বলবো তাদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য ঐতিহাসিকরা পাননি ফলে আগের পর্ব গুলোর মতো আকর্ষণীয় কিছু এই পর্বে বলার নেই। প্রথমে ভেবেছিলাম বলবনা কিন্তু ইতিহাস যখন বলতে বসেছি তখন বাদ দিয়ে যাওয়াটা অন্যায় হবে। আরকি, নিরস গল্পই শুনুন তবে।

আগের পর্বে যে বলেছিলাম যে পলাশীর যুদ্ধের পরে হটাৎ করে অনেকেই বড়লোক হয়ে গিয়েছিল। সেই কয়েকজন বড়লোকের মধ্যে একজন বিশেষ জনপ্রিয় ছিলেন সে হলেন মহারাজা রাজবল্লভ(১৬৯৮-১৭৬৩)। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম রাজস্ব বন্দোবস্তের সময়ে রাজবল্লভ লর্ড ক্লাইভ কে সাহায্য করেছিলেন বলে প্রমান পাওয়া যায় অনেক নথিতে। পলাশীর যুদ্ধের পর রাজবল্লভ কলকাতায় চলে আসেন এবং সুতানুটির অন্তর্গত বাগবাজারে এসে বসবাস শুরু করেন। আজকের যে রাজবল্লভ পাড়ার নাম শুনি সেটা এনার নাম থেকেই আগত। কথিত আছে যে মহারাজা রাজবল্লভের বাড়ির সামনের রাস্তাই রাজবল্লভ পাড়া নামে পরিচিতি।

কিন্তু এই মহারাজা রাজবল্লভ কে ছিলেন? বা ওনার পদবী কী ছিল? সেই নিয়ে নানা গবেষক নানা কথা বলেছেন। যেমনঃ
কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর “বাংলার ইতিহাস” গ্রন্থে রাজবল্লভকে বৈদ্য বলে বর্ণনা করেছেন। যা আবার তৎকালীন কলকাতার জনশ্রুতির সাথেও মিলে যায়।

শ্রী তপনমোহন চট্টোপাধ্যায়ের মতে মহারাজ রাজবল্লভের পদবী ছিল “সেনগুপ্ত”।
আবার শ্রী রাধারমণ মিত্র বলেন রাজবল্লভের পদবী ছিল “সোম”।

কিন্তু মজার ব্যাপার এই হল যে রাজবল্লভের বংশধরেরা কোনোদিন সেনগুপ্ত বা সোম পদবী ব্যাবহার করেনি। তাদের ব্যাবহৃত পদবী ছিল রায়। ফলে এই বিতর্কের মীমাংসা হয়নি।

মহারাজা রাজবল্লভের অধীনে একজন সরকারী দেওয়ান ছিলেন। তিনি হলেন পাইকপাড়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ। তিনি হেস্টিংসের গুপ্ত চক্রান্ত সমুহের সহায়ক। ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে হেস্টিংস তাঁকে কলকাতার দেওয়ান পদে নিযুক্ত করেন। যখন পাঁচশালা বন্দোবস্ত হয় তখন গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ নাটোর রাজবাড়ির কিছু অংশ কিনে নেন এবং দিনাজপুর জমিদারির বেশ কিছু অংশ কিনে নেন। নিজের ধনসম্পত্তির প্রভাব দেখাতে তিনি মাতৃ শ্রাদ্ধে প্রচুর অর্থ ব্যায় করেন। পরম বৈষ্ণব লালাবাবু(কৃষ্ণচন্দ্র সিংহ ১৭৭৬-১৮২২) ছিলেন তাঁর পৌত্র।

শুধু এখানেই শেষ নয়। হেস্টিংসের কৃপায় আরও একজন বিশাল ধনী ব্যাক্তিতে পরিনত হয়েছিলেন তিনি হলেন কাশিমবাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কান্তবাবু হরফে কৃষ্ণকান্ত নন্দী। প্রথম জীবনে মুদির দোকানে কাজ শুরু করেন কিন্তু ফারসি এবং কাজ চালানর মতো ইংরাজি জানতেন। সেই সুবাদে কাজ পান ইংরাজ কুঠিতে মুহুরি হিসাবে। ইংরাজ কুঠিতে কাজ করের সময়েই চোখে পরেন ওয়ারেন হেস্টিংসের যদিও হেস্টিংস তখন কোম্পানির একজন কর্মচারী মাত্র। পলাশীর যুদ্ধের সময়ে সিরাজের ভয়ে ভীত হেস্টিংস্ কে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন কান্তবাবু। এরপর হেস্টিংসের সাথে ব্যাবস্যা শুরু করেন এবং প্রায় সব রকম অপকর্মের সঙ্গী হন। ১৭৭২ সালে হেস্টিংস গভর্নর হলে উপহার স্বরূপ প্রচুর জমিদারী পান কান্তবাবু। কাশীর রাজা চৈৎ সিং এর ওপর আক্রমণের মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন এই কান্তবাবু হরফে কৃষ্ণকান্ত নন্দী। এই কাজের উপহার স্বরূপ লুণ্ঠিত সম্পত্তির বেশ বড় অংশ নিজের ভাগে পান।

এই সময়ে অর্থাৎ অষ্টাদশ শতাব্দীতে কলকাতায় একজন ব্যাক্তি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি হলেন নন্দরাম সেনের পুত্র গৌরী সেন হরফে গৌরীশঙ্কর সেন। ১৭২৩ খ্রিষ্টাব্দে হুগলী জেলা থেকে কলকাতায় এসে ব্যবসা শুরু করেন নন্দরাম সেন। গৌরী সেন সেই ব্যাবসাকেই এগিয়ে নিয়ে যান এবং ইংরেজদের সাথে আমদানি এবং রপ্তানির ব্যাবসা শুরু করেন ও প্রভূত অর্থ উপার্জন করে কলকাতার খ্যাতনামা ধনী ব্যাক্তিতে পরিনত হন। কিন্তু তিনি ব্যাবসার জন্য খ্যাত হননি। তিনি খ্যাত ছিলেন্ দানের জন্য। অনেক দেনাগ্রস্ত এবং রাজদ্বারে দণ্ডিত ব্যাক্তিদের তিনি অর্থ সাহায্য করেছিলেন। সেই সময়ের একটি প্রবাদ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল- “লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন”। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই পরিবার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। হতে পারে আমার জানা নেই।

আজকের নিরস গল্প এখানেই শেষ করি সামনের দিন আবার বলবো সেইসব বাঙালিদের কথা যারা সেই সময়ে ব্যাবসা করে বড়লোক হয়েছিল।   

0 Comments:

Post a Comment