কলকাতাঃ দুঃসহ রাতের নগরী ( kolkata: the City of Nightmares):

want to read this blog in English? click here


কলকাতা আমাদের তিলত্তমা তবে দ্যা সিটি অফ জয় ছাড়াও আমাদের শহরের আরও একটি নাম আছে “দুঃসহ রাতের নগরী” কেন? বলছি শুনুন।

সালটা ছিল ১৭৩৭, ৩০শে সেপ্টেম্বর-এর রাত(মতান্তরে ১১ই অক্টোবর ১৭৩৯)। ইংরেজরা ভালভাবেই বানিজ্য চালাছে কলকাতায় বসে। ফোর্ট উইলিয়ামও তৈরি হয়ে গিয়াছে, তবে বলে রাখা ভালো সেইসময় বর্তমান ক্রিক রো-হেস্টিংস সরণি বরাবর একটি খাল/ জলপথ ছিল যা বর্তমান সল্টলেক থেকে প্রিন্সেপ ঘাট অবধি বিস্তৃত ছিল। সাহেবরা এই খালকে বলত “ক্রিক”। এই জলপথের দুপাশে গড়ে উঠেছিল সাহেবদের বসতি।

হঠাৎ সব সুখ ভঙ্গ করে এল ৩০শে সেপ্টেম্বর-এর রাত(মতান্তরে ১১ই অক্টোবর ১৭৩৯)। মারাত্মক ঝড় উঠেছিল সেদিন, সেই রাতে ৪০ ফুট বেড়ে যায় হুগলী নদীর জল ।সাহেবদের তৈরি মজবুত বাড়িগুলির জানলা-দরজা দেওয়াল থেকে আলাদা করে দিয়েছিল ঝড়-এর দাপট, কাঁচা বাড়ি গুলি মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল সেই রাতে। বড় বড় বাণিজ্য জাহাজ গুলিকে তছনছ করে দিয়েছিল ঝড়ের দাপট, জলে তলিয়েও গিয়াছিল কয়েকটা।

“জেন্টেলম্যান ম্যাগাজিন”- এর রিপর্ট অনুসারে পরের দিন সকালে শহরেকে দেখে মনে হয়াছিল শত্রুপক্ষ নির্বিচারে গোলা বর্ষণ করেছে শহরের ওপর। গঙ্গায় ৯টি জাহাজের ৮টি যাত্রীগণ সমেত বিনাস পায় এবং জাহাজের মোট ২০০জনের বেশি যাত্রী জলে ডুবে মারা যায়। ছোটো নৌকাগুলির বেশিরভাগের অস্তিত্ব ঝড়ের পরে পাওয়া যায়নি। মোট ৩০,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল এই ঝড়ে। মারা গিয়েছিল অসংখ্য পশুপাখি। চিৎপুরের প্রখ্যাত গোবিন্দ মিত্তিরের নবরত্ন মন্দিরও ভেঙ্গে গিয়াছিল এই ঝড়ে। কলকাতার পর্তুগিজ নির্মিত গির্জার চূড়াটি ঝড়ে ভূপতিত হয়ই।ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সুপ্রিম কাউন্সিল-এর সদস্য স্যার ফ্রান্সিস কলকাতা থেকে লেখা একটি চিঠিতে এই ঝড়-এর বর্ণনা করেন।
ঠিক এর পরের বছর কলকাতাতে দুর্ভিক্ষ হয়, তৎকালীন কোম্পানির প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় থমাস ব্রড্ডি এবং তৎকালীন মুঘল সম্রাট নাদের শাহ্‌ কলকাতা ও তৎসংলগ্ন জনপদ গুলির খাজনা মুকুব করে দেয়। ইংরেজ কোম্পানি কলকাতার জনগনের প্রতি সহানুভুতির পরিচয় দেয়, বিশেষত ঝড়ে গৃহহীন মানুষদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সুযোগ করে দেয়।

এরপর থেকে আস্তে আস্তে মজে যেতে থাকে এইজলপথ। সিরাজ-উদ-দউল্লা-র সময় ও এই জলপথ এর অস্তিত্ত ছিল তবে তখন প্রায় মজে গিয়েছে এই জলপথ। পলাশীর যুদ্ধের বেশ কিছু বছর পর এই মজা জলপথের ওপর তৈরি হয় রাস্তা যা বর্তমানের ক্রিক রো এবং ওয়েলিংটন স্কোয়ার।

সেই রাতের পর থেকেই কলকাতার একটি নতুন নাম যোগ হয় “দুঃসহ রাতের নগরী” আর এই সৃতি মিশে আছে আজকের “ক্রিক রো এবং ওয়েলিংটন স্কোয়ারে”। বর্তমান কলকাতার ক্রিক রো রাস্তাটি এই জলপথের একটি সামান্য অংশ যা সুবোধ মল্লিক স্কয়ার এবং আচার্য জগদীশ চান্দ্র বোস রোডকে যুক্ত করেছে।

নোটঃ তৎকালীন সময়ে “ক্রিক রো” এর স্থানীয় নাম ছিল “ডিঙি-ভাঙা”। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রায় সব মানচিত্রতে এই অংশের নাম “ডিঙি-ভাঙা”।




অজানা কলকাতা টুইটার (ojana Kolkata in twitter) https://twitter.com/KolkataOjana?lang=en

অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour




5 comments:

  1. কলকাতা নিয়ে অনেক অজানা তথ্য পাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে।আরো এই রকম তথ্য পাবো আশা করি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রতি সপ্তাহে ১টা করে পাবে

      Delete
  2. Khub vlo laglo onk ke6u ojana jinis jante parlam

    ReplyDelete
    Replies
    1. thank you very much , please read all of my blogs & share my blog

      Delete