শোভাবাজার রাজবাড়ি এবং নবকৃষ্ণ দেব:
কলকাতার বাঙালি
বড়লোকদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু আকস্মিক ভাবে বড়লোক হয়েছেন। সেই রকমই পলাশীর যুদ্ধের
পর যারা আকস্মিক ভাবে বড়লোক হয়েছিলেন তাদের মধ্যে শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা
নবকৃষ্ণ দেব অন্যতম।
নবকৃষ্ণ দেব হলেন
রামচরনের পুত্র। রামচরন প্রথম জীবনে কটকের দ্দেওয়ান ছিলেন এবং পরবর্তী জীবনে তিনি
গোবিন্দপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু আকস্মিক ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়। পিতার
মৃত্যুর পর নবকৃষ্ণ দেব তাঁর মায়ের তত্ত্বাবধানে উর্দু, ফারসী, আরবি এবং ইংরাজি
শিখতে থাকেন এবং একসময়ে এই সব ভাষা লিখতে এবং পড়তে পটু হয়ে ওঠেন।
নবকৃষ্ণ দেব তাঁর
প্রথম কর্ম জীবন শুরু করেন পোস্তার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা লক্ষ্মীকান্ত ধরের
ব্যাবসার মুহুরি হিসাবে, কথিত আছে যে নবকৃষ্ণ দেব ঠিক এই কারনেই পোস্তা রাজবাড়িতে
জুতো
পড়ে ঢুকতেন না। এই লক্ষ্মীকান্ত ধরের চেষ্টায় ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে নবকৃষ্ণ দেব লর্ড ক্লাইভের ফারসী ভাষার মুন্সী নিযুক্ত হন এবং সিরাজ উদ দৌল্লাকে নবাবের আসন থেকে সরাতে যে লেখা-পড়া হয়েছিল কোম্পানির তরফ থেকে তাঁর পুরোটাই করেন নবকৃষ্ণ দেব। ফলস্বরূপ সিরেজের গুপ্তধন থেকে কোটি কোটি টাকা লাভ করেন এবং কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন শোভাবাজার রাজবাড়ি এবং শুরু করেন কলকাতার প্রথম দুর্গা পূজা। ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে নবকৃষ্ণ দেবকে ‘রাজা বাহাদুর’ উপাধি দেন মোঘল সম্রাট শাহ্ আলম। ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে সুতানুটির তালুকদারি লাভ করেন এবং গভর্নর হেনরি ভ্যান্সিটার্ট-এর বেনিয়ান হন এবং পরবর্তীতে ওয়ারেন হেস্টিংসের বেনিয়ান হন।
পড়ে ঢুকতেন না। এই লক্ষ্মীকান্ত ধরের চেষ্টায় ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে নবকৃষ্ণ দেব লর্ড ক্লাইভের ফারসী ভাষার মুন্সী নিযুক্ত হন এবং সিরাজ উদ দৌল্লাকে নবাবের আসন থেকে সরাতে যে লেখা-পড়া হয়েছিল কোম্পানির তরফ থেকে তাঁর পুরোটাই করেন নবকৃষ্ণ দেব। ফলস্বরূপ সিরেজের গুপ্তধন থেকে কোটি কোটি টাকা লাভ করেন এবং কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন শোভাবাজার রাজবাড়ি এবং শুরু করেন কলকাতার প্রথম দুর্গা পূজা। ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে নবকৃষ্ণ দেবকে ‘রাজা বাহাদুর’ উপাধি দেন মোঘল সম্রাট শাহ্ আলম। ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে সুতানুটির তালুকদারি লাভ করেন এবং গভর্নর হেনরি ভ্যান্সিটার্ট-এর বেনিয়ান হন এবং পরবর্তীতে ওয়ারেন হেস্টিংসের বেনিয়ান হন।
এবার একটু অন্য কথা
বলি। ধরুন আপনি চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে অরবিন্দ সরণির দিকে এগিয়ে চলেছেন হঠাৎ
দেখবেন রাস্তার মাঝখানে একটি কালী মন্দির(আটচালা শৈলীর পুটিয়া কালী মন্দির)। এই
কালী মন্দির থেকে ডানদিকে একটি রাস্তা চলে যাচ্ছে সেটি হল নবকৃষ্ণ দেব স্ট্রীট। এই
রাস্তা ধরে প্রায় ১০০মি. গেলেই চোখে পড়বে রাজবাড়ি। কিন্তু যারা গেছেন তাদের মনে
প্রশ্নও আসবে যে রাজবাড়ি তো দুটো ? তাহলে অপরটি কি আলাদা? এই উত্তরটাই দেব এখন।
আসলে রাস্তার
দক্ষিণ পাশে যে বাড়িটি আছে সেটিও শোভাবাজার রাজবাড়ির একটি অংশ। নবকৃষ্ণ দেব যখন
সম্পত্তি উইল করেন তখন তাঁর কোন পুত্র সন্তান ছিলনা ফলে তিনি তাঁর ভাইপো গোপীমোহন
কে দত্তক নেন বলে কথিত আছে কিন্তু রাজবাড়ির বংশধরদের এবং সম্পত্তির উইল অনুসারে
দত্তক নেন গোপীমোহনের পুত্র রাধাকান্ত দেবকে এবং সম্পূর্ণ সম্পত্তি তাঁকে লিখে দেন
নবকৃষ্ণ দেব। রাজপরিবারের বক্তব্য অনুসারে নবকৃষ্ণ দেব যখন মারা যান তখন তাঁর
স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন এবং নবকৃষ্ণ দেব মারা যাবার পর তাঁর পুত্র রাজকৃষ্ণ
জন্মগ্রহণ করেন। এই সময় সম্পত্তির ভাগ দাবি করেন নবকৃষ্ণ দেবের স্ত্রী। এইসময়ে
রাধাকান্ত দেব আসল যে সম্পত্তি পেয়েছিল তাঁর ভাগ না দিয়ে সমপরিমাণ সম্পত্তি নিজে
তৈরি করে দিয়েছিলেন তাঁর ফলশ্রুতি হল দক্ষিণ পাশের রাজবাড়ি। অর্থাৎ সেটিও
শোভাবাজার রাজবাড়িরই একটি অংশ।
নবকৃষ্ণ দেব নিজের
পণ্ডিত সভা তৈরি করেছিলেন এই সভায় শাস্ত্রীয় বিধান দেবার ব্যাবস্থাও করেছিলেন এবং
উপযুক্ত বিধানের পরিবর্তে পণ্ডিতদের পুরস্কৃত করাহত। এই পণ্ডিত সভার প্রধান ছিলেন
জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন। এরপর এই পণ্ডিত সভা সফল ভাবে পরিচালনা করেছিলেন এবং স্ত্রী
শিক্ষার বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। তিনি সবসময়ে চাইতেন যে মেয়েরা শিক্ষিত হোক সেই সাথে
তিনি পর্দা প্রথারও সমর্থক ছিলেন। রাধাকান্ত দেবের মেয়ে সংস্কৃত, হিন্দি এবং
ইংলিশ-এ পণ্ডিত হয়ে ওঠেন এবং রাধাকান্ত দেব হিন্দু কলেজ এবং মেয়েদের বেথুন স্কুল
প্রতিষ্ঠার একজন বিশেষ উৎসাহী ছিলেন“কলকাতার শিক্ষা ব্যাবস্থার বিকাশ” ব্লগে
বলেছি।এবং এখানেই শেষ নয় তিনি গরিব চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নীল বিদ্রহের সময়ে
এবং তারই অনুমতিতে দীনবন্ধু মিত্র ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি লেখেন।এছাড়া তিনি প্রথম
ব্যাক্তি যিনি তাঁর সম্পত্তি মেয়েদের মধ্যেও ভাগ করে দিয়েছিলেন। আবার রামমোহনের
সতীদাহ প্রথা ও বিদ্যাসাগর-এর বিধবা বিবাহ আইনের চুড়ান্ত বিরোধী ছিলেন। অদ্ভুত
চরিত্র বটে!
নবকৃষ্ণ দেব-এর পড়ে
রাধাকন্তু দেব যিনি কলকাতার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন
এবং শিক্ষা বিশেষত নারীশিক্ষায় তাঁর যথেষ্ট অবদান আছে যা আগেই বলেছি।এছাড়া সংস্কৃত সাহিত্তে তাঁর অবদান কল্পনার অতিত। তিনি ৪০ বছরের চেষ্টায় ৮
খণ্ডে “শব্দকল্পদ্রুম” রচনা করেন যা সংস্কৃত সাহিত্তের একটি অমূল্য সম্পদ এবং এই
বই তাঁর রুচি এবং শিক্ষার পরিচয় বহন করে।
কিন্তু শোভাবাজার
নামটা কীভাবে এল? অনেক পরস্পর বিরোধী মতবাদ আছে। নবকৃষ্ণ দেব মাতৃ শ্রাদ্ধে ১০
লক্ষ টাকা ব্যায় করেছিলেন এবং একটি বিরাট সভা বসিয়েছিলেন এই থেকে এই অংশের নাম হয়
সভাবাজার যা অপভ্রংশ হয়ে হয় শোভাবাজার। আবার একদল ঐতিহাসিক বলেন যে শোভারাম বসাকের
নাম থেকে হয় শোভাবাজার। নবকৃষ্ণ দেব প্রথম যিনি কলকাতায় ঘোড়ার গাড়ি কিনেছিলান।
১৮৯৭ সালে স্বামী
বিবেকানন্দ অসাধারন বক্তৃতা দেওয়ার পর তাঁকে এই বাড়িতে সংবর্ধনা দেওয়া হয় যা
নবকৃষ্ণ স্ট্রীটের উত্তর পাশের বাড়িটিতে এবং সেই সংবর্ধনা স্থানে ঠাকুর দালানের
সামনে একটি ফলক আছে বিবেকানন্দের নামে। হয়ত সকলেই দেখেছেন।
এই পরিবারের অনেকেই
পরবর্তীতে অনেক সেবা মূলক ও সামজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার প্রথম
সম্পাদক অক্ষয়কুমার দত্ত এই পরিবারের একজন সদস্য এবং এই বংশের পরবর্তী
উত্তরাধিকারী বিনয়কৃষ্ণ দেব বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে জমি এবং অর্থ দান করেছিলেন।
পরবর্তীতে এই পরিবারের অনেকেই নানা ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ আবার আধুনিক যুগের অনেকেই
আইনি পরামর্শ দাতা হিসাবে দেশে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।
শেষে এটুকু বলতে
পারি আজও নিজেদের ঐতিহ্য বহন করে শোভাবাজারের দুটি রাজবাড়ি নিজের বংশ গরিমাকে বজায়
রেখে চলেছেন এবং পুরনো প্রাচ্য সংস্কৃতির গন্ধ আজও এই দুটি রাজবাড়িতে গেলে পাওয়া
যায়।
sovabazar rajbari google map link: https://goo.gl/maps/5nZUnLkh4zcdA1jT9
0 Comments:
Post a Comment