Chandni Chowk Market- the prize of lotary (চাঁদনী চক বাজার- লটারির পুরস্কার)

চাঁদনী চক বাজার- লটারির পুরস্কার



অদ্ভুত শুনতে লাগল? 

হ্যাঁ কলকাতায় এই অদ্ভুত ব্যাপার হত নাকি ? 

কিন্তু লটারি জিতে চাঁদনি চকের মালিক ব্যাপারটা সত্যিই গোলমেলে।

কিন্তু ভয় নেই গোলমাল ব্যাপারটা সমাধান করব বলেই না আমি আপানদের গল্প বলতে বসেছি।
লটারির ব্যাপারটাতে পরে আসছি। আগে মালিকের গল্পটা একটু বলেনি।

পলাশীর যুদ্ধের পর কলকাতাতে অনেকেই হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে ওঠেন। তাদের মধ্যে গোকুলচন্দ্র মিত্র অন্যতম। ১৭২৪ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান দক্ষিণেশ্বরের নিকট বালিতে তাঁর জন্ম। ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দে বর্গী আক্রমণের সময়ে তিনি তাঁর বাবার সাথে কলকাতাতে চলে আসেন এবং প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে হাতি ঘোড়ার রসদ সরবরাহের ব্যাবসা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে নুনের প্রায় একচেটিয়া ব্যাবসা শুরু করেন এবং মা লক্ষ্মীর কৃপায় অল্প সময়ই ধনবান হয়ে ওঠেন। কিন্তু শুধু মা লক্ষ্মী নয় ভাগ্যদেবীর কৃপাও যে সবসময়ে তাঁর সাথে ছিল তা বোঝা যায় ১৭৮৪ সালে(সালটি নিয়ে মতান্তর আছে।)। লটারিতে জিতে তিনি পেলেন চকের বাজার। আর সেই থেকেই চাঁদনী চকের মালিক হলেন গোকুলচন্দ্র মিত্র। কথিত আছে একবার বিষ্ণূপুরের রাজা তাঁর কাছে রাজপরিবারের গৃহদেবতা মদনমোহন বিগ্রহকে রেখে ১ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই সময়ে গোকুলচন্দ্র মিত্র অনুরুপ ওপর একটি বিগ্রহ তৈরি করান এবং বিষ্ণূপুরের রাজ পরিবার কে সেই নকল মূর্তি দিয়েছিলেন টাকা ধার দেওয়ার পরে এবং আসল বিগ্রহটি নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই থেকে ওই অংশের নাম হয় ‘মদনমোহন তলা’। গোকুলচন্দ্র মিত্র একটি গঙ্গার ঘাটও তৈরি করেছিলেন যার আজকের নাম্ ‘গোকুল মিত্রের ঘাট’।

আজকের বর্তমান মদনমোহন তলা এবং চাঁদনী চক বাজারের মধ্যে প্রায় ৩কিমি এর দূরত্ব কিন্তু আজের চাঁদনী চক বাজার ও মদনমোহন তলা সম্পূর্ণ নিয়েই ছিল সেদিনকার চকের বাজার বা চাঁদনিচক বাজার।

এবার সব অদ্ভুত ব্যাপারের সমাধান করব। লটারির বদলে কিভাবে এতবড় সম্পত্তি জিতে নেওয়া কিভাবে সম্ভব। আসলে পলাশীর যুদ্ধের পর কলকাতার সম্পূর্ণই অধিকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে যাওয়ার পর দেখা দিল এক সমস্যা। এত সম্পত্তি সামলাবে কে? তাহলে উপায়? সম্পত্তি বিলিয়ে দিয়ে হবে তাতে সম্পত্তির দেখশোনাও হবে আবার রাজস্ব আসবে। কিন্তু আবার সম্পত্তি যে দেব কি উপলক্ষে আর সবাইকে তো দেওয়াও যাবেনা। এই সময়ে ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় খেলা লটারির কিছু পরিবর্তন হল বিজেতাকে দেওয়া হবে টাকার বদলে সম্পত্তি। আর টিকিত জাতে সকলে কিনতে না পাড়ে অর্থাৎ জাতে সম্ভ্রন্ত বড়লোকরাই টিকিত কিনতে পারে তাঁর জন্য দাম রাখা হল ৫০ টাকা।
কিন্তু এই পদ্ধতি শুরু হয়েছিল কবে? অনেকের মতে অষ্টাদশ শতেকর ৮০র দশকের গোড়াতেই শুরু হয়েছিল আবার অনেকের মতে ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয়েছিল এই ব্যাবস্থা। প্রথমে বেসরকারি ভাবে শুরু হয়েছিল ১৮০৯ সালে গভর্নর জেনারেল সরকারী ভাবে বসালেন লটারি কমিটি। এর পরে লর্ড ওয়েলেসলি এই কমিটির প্রসার ঘটালেন। ১৮০৯-১৮১৭ সালের মধ্যে কোম্পানি ১২ লক্ষ টাকা আয় করেছিল শুধু লটারির টিকিত বিক্রি করে। কিন্তু আকচমকাই ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে এই কমটির অবলুপ্তি ঘটানো হয়।

এই অবলুপ্তি কারণ হিসাবে অনেকে অনেক মতামত প্রকাশ করেন। অনেকে বলেন যে দেশের জনগন নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু শুধুমাত্র নেটিভদের প্রশ্নে কোম্পানি তাঁর লাভজনক ব্যাবসা তুলে দেবে সেটা কেমন করে হতে পারে? আবার অনেকে বলেন যে কোম্পানি এই ব্যাবসায় লাভ করেত পারছিলনা। কিন্তু শেষ দশ বছরে কোম্পানি ১০,১৯,৩৪৯ টাকার টিকিট বিক্রি করেছিল তাহলে ক্ষতি কেমন করে হয়? অর্থাৎ উত্তরটা আজও অজানাই থেকে গেছে এখনো। 

দাঁড়ান একটু চমকেদি।কর্নওয়ালিস স্ট্রীট, আমহাস্ট স্ট্রীট, মানিকতলা, বউবাজার, ওয়েলিংটন স্ট্রীট, এই রাস্তা গুল দিয়ে হেঁটে জানত? সবই কিন্তু লটারির দান। দাঁড়ান। চীনে ব্রেকফাস্ট খেটে টেরিটি বাজার জানত? সেটাও কিন্তু লটারির দান১৭৯১ সালে চার্লস ওয়েস্টন লটারি জিতে পেয়েছিলেন এই জায়গাটি।

তাহলে কলকাতাকে লটারির শহর বলাই যায় কি বলেন?   

0 Comments:

Post a Comment