মার্বেল প্যালেস এবংরাজেন্দ্র মল্লিক
আগের দিন তো শুনলেন
পাথুরিঘাটার মল্লিক পরিবারের কথা। আসুন আজ জেনেনি অন্য এক মল্লিক পরিবারের কথা।
রাজেন্দ্র মল্লিক ও তাঁর পরিবারের কথা।
রাজেন্দ্র মল্লিক
সম্পূর্ণ ওপর এক মল্লিক পরিবারের, আগের মল্লিক পরিবারের কোন উত্তরসূরি মনে করে ভুল
করবেন না যেন।
এই রাজেন্দ্র
মল্লিক পরিবারের আদি পুরুষ ছিলেন মধু শীল। তাঁর অধস্তন ত্রয়াদশ পুরুষ যাদব শীল
‘মল্লিক’ উপাধি লাভ করেন সেই থেকেই এই বংশ মল্লিক উপাধি লাভ করেন। অধস্তন পঞ্চদশ
পুরুষ জয়রাম মল্লিক বর্গী হামলার ভয়ে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন। কলকাতায় এসে
গোবিন্দপুর অংশে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু গোবিন্দপুরে নতুন দুর্গ নির্মাণ শুরু হলে
তিনি তাঁর বসতি উঠিয়ে নিয়ে কলকাতার চোরাবাগান অংশে বসতি শুরু করেন।
রাজেন্দ্র মল্লিক
হলেন জয়রাম মল্লিকের অধস্তন ষষ্ঠ পুরুষ। জয়রামের পুত্র পদ্মলোচন, পদ্মলোচনের পুত্র
শ্যামসুন্দর, শ্যামসুন্দরের পুত্র গঙ্গাবিষ্ণূ, গঙ্গাবিষ্ণুর পুত্র নীলমণি এবং এই
নীলমণির পুত্র হলেন রাজেন্দ্র মল্লিক।
জয়রাম মল্লিক
কলকাতায় আসার সাথে সাথেই ব্যাবসা বাণিজ্যে হাতপাকালেও এই ব্যাবসার মূল শ্রীবৃদ্ধি
করেন গঙ্গাবিষ্ণু মল্লিক।
কিন্তু আপনি যদি
দুটো মল্লিক পরিবারকে গোলান তবে ভুল হবে তবে ১০০% ভুল হবেনা কারণ দুটি পরিবার
আলাদা আলাদা হলেও তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক আছে দীর্ঘদিনের। রাজেন্দ্র মল্লিকের
প্রপিতামহ শ্যামসুন্দর মল্লিকের কন্যা ক্ষুদিমনি দেবীকে বিবাহ করেছিলেন
পাথুরিঘাটার মল্লিক পরিবারের নিমাইচরন মল্লিক। আবার রাজেন্দ্র মল্লিকের পুত্রীর
সাথে বিয়ে হয়েছিল নিমাইচরন মল্লিকের প্রপৌত্র প্রমথনাথ মল্লিকের বিবাহ হয়েছিল।
এইযে এতবার করে
রাজেন্দ্র মল্লিকের কথা বলছি কেন?
রাজেন্দ্র মল্লিক
ছিলেন নীলমণি মল্লিকের দত্তক পুত্র। কিন্তু তিনি ইংরাজি, ফারসি এবং সংস্কৃত ভাষায়
বিশেষ পণ্ডিত হয়েছিলেন এবং বংশের ব্যাবসাকে নিজের শিক্ষা এবং বুদ্ধির বলে একাই
বহুগুন বৃদ্ধি করেছিলেন।
১৮৬৫-৬৬
খ্রিষ্টাব্দে ওড়িশায় যখন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তখন কলকাতায় অন্নসত্র খুলে
দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সাহায্য করেছিলন রাজেন্দ্র মল্লিক। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ
সরকার থেকে তিনি ‘রাজা বাহাদুর’ উপাধি লাভ করেন।
এবার আসি মার্বেল
প্যালেসের কথায়। শুধুমাত্র নিজের প্রতিপত্তি দেখানো নয় বরঞ্চ নিজের শিল্প সত্তাকে
প্রতিষ্ঠিত করবার জন্যই তৈরি করেছিলেন রাজেন্দ্র মল্লিক। ১৮২১ সালে তাঁর পিতা
নীলমণি মল্লিক বর্তমান বাড়ির উত্তর-পশ্চিম কোনে একটি নিচু ছাদের জগন্নাথ মন্দির
বানান এবং মন্দিরের পাশের পুকুরে একটি ফোয়ারা তৈরি করেন যা তৎকালীন এমনকি বর্তমান
সময়ে কলকাতার শ্রেষ্ঠ স্থাপত্তের মধ্যে অন্যতম। পিতার এই শিল্প সত্তাকে দেখে
অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্পূর্ণই মার্বেল পাথর নির্মিত প্রাসাদ তৈরি
করেন।
এই ফোয়ারাটি এখনো
আছে মার্বেল প্যালেসের লোহার গেট পেরিয়ে ঢুকলে প্রথমেই সামনে যে স্থাপত্যটি পর্বে
সেটি হল নীলমণি মল্লিকের নির্মিত ফোয়ারা। শুধু তাই নয় এই মার্বেল প্যালেসে আজও
রাজেন্দ্র মল্লিকের বংশধররা বসবাস করেন। আপনি চাইলে এই মার্বেল প্যালেস ঘুরে দেখতে
পারেন তবে তাঁর জন্য অনেক অনুমতির বেড়াজাল পেরোতে হবে তবুও চেষ্টা করে দেখতে
পারেন।
দাঁড়ান দাঁড়ান
চললেন কোথায়? এখনো তো শেষ হয়নি। এবার শুনুন মার্বেল প্যালেসে রাজেন্দ্র মল্লিক
তৈরি করেছিলেন নিজের বাক্তিগত চিড়িয়াখানা। সম্ভবত অয়াজাদ আলি শাহ্ এর পর
রাজেন্দ্র মল্লিকই ব্যাক্তিগত চিড়িয়াখান প্রতিষ্ঠা করেন। এমনকি অয়াজাদ আলি শাহ্
এর মৃত্যুর পর তাঁর অনেক সম্পত্তি এবং ব্যাক্তিগত চিড়িয়াখানার বেশির ভাগই কিনে নেন
রাজেন্দ্র মল্লিক। এরপর ১৮৬৭ সালে আলিপুর চিড়িয়াখান প্রতিষ্ঠার সময়ে নিজের
ব্যক্তিগত সংগ্রহের অনেক পশুই তিনি দান করেন। আজও যদি মার্বেল প্যালেসে যান তাহলে
আজও পাখিরালয় এবং হরিন দেখার সুযোগ মিললেও মিলতে পারে।
চিড়িয়াখানার
ইতিহাসের দ্বিতীয় পর্বে বলেছিলাম না যে অয়াজাদ আলি শাহ্ এর স্মৃতি বহন করছে
মার্বেল প্যালেস। মিলল তো?
0 Comments:
Post a Comment