KOLKATA MEDICAL COLLEGE- HISTORY OF ESTABLISHMENT AND JOURNEY
কলকাতা মেডিকেল কলেজ কলকাতার একটি সুপরিচিত এবং ভরসাযোগ্য চিকিৎসাক্ষেত্র সেই সাথে ডাক্তারি শিক্ষার একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান, যা ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে নিজের সুখ্যাতি বজায় রেখেছে। আসুন জেনেনি এই মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস।
১৮৩৫
খ্রিষ্টাব্দে মেকলে মিন্ট সংস্কার আইনে শিক্ষা প্রসারের নীতি ঘোষিত হওয়ার পর
কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। কিন্তু এর আগে চিকিৎসা
বিদ্যা প্রদানের জন্য ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে স্কুল ফর নেটিভ ডক্টরস প্রতিষ্ঠিত হয় এবং
১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ‘দি ক্যালকাটা মেডিকাল এন্ড ফিজিক্যাল সোসাইটি’
প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুল ফর নেটিভ ডক্টরস ছাড়াও কলকাতা মাদ্রাসা এবং সংস্কৃত কলেজে
সনাতনী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার পাঠ দেওয়া হত।
১৮৩৬
খ্রিষ্টাব্দে লর্ড বেন্টিঙ্কের সভাপতিত্তে মার্চ মাসে কলকাতা মেডিকেল কলেজের
কার্যক্রম শুরু হয়। শিক্ষক পদে ডাঃ গুডিভ(মেডিসিন ও অ্যানাটমির অধ্যাপক), ডাঃ
ব্রামলি, ডাঃ ওসানিসি ও আয়ুর্বেদ শিক্ষার জন্য সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক মধুসূদন
গুপ্তকে নিয়োগ করাহয়। কিন্তু কলকাতার অনেক অধিবাসী এই মেডিকেল কলেজের সহযোগিতা
করেনি। তাই সমাচার দর্পণ পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয় যার সারমর্ম দাড়ায় এই যে,
অশিক্ষিত এবং অদক্ষ বৈদ্যের জন্য প্রতিদিন শহরে প্রচুর লোক মারা যাচ্ছে। মেডিকেল
কলেজের মতো অসুখের সঠিক চিকিৎসা হওয়ার স্থান নির্মাণ হলেও কেন লোকে এঁর সহযোগিতা
করছে না তা সত্যি খুবই রহস্যময়।
কিন্তু এই
মেডিকেল কলেজের দ্রুত উন্নতির জন্য এগিয়ে আসেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। ১৮৩৬-এ
ইংলিশম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে দ্বারকানাথ ঠাকুর মুক্তহস্তে ২০০০
মুদ্রা দান করেছেন এবং এও বলেছেন যে আগামী ৩ বছর বার্ষিক পরীক্ষায় যারা কৃতিত্বের
সাথে পাস করবে তাদের সমপরিমান অর্থ পুরষ্কার হিসাবে দান করা হবে। রামগপাল ঘোষ
ছাত্রদের পড়ার সুবিধার জন্য প্রচুর বই দান করেন।
আজকের যে মেডিকেল
কলেজের ভবনটি দেখি সেটি তৈরি করেছিল বার্ন এন্ড কোম্পানি। মেজর এইচ ফ্রেজার এবং
বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারস-এর কর্নেল ডব্লু এন ফরবেস দেখাশোনা করতে লাগলেন কাজের। বাবু
মতিলাল শীল তার বাগানবাড়ির একটি অংশ ছেড়ে দেন এই ভবনটি তৈরি করবার জন্য। ১৮৪৮
খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর মার্কুইস অফ ডালহৌসি কলকাতা মেডিকেল কলেজের বর্তমান
ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৮৫২সালে নতুন ভবনের দরজা খুলে যায়
সর্বসাধারনের জন্য।
১৮৩৭ থেকে
৯ফেব্রুয়ারি ১৮৩৯ সালের ‘সমাচার দর্পণ’ এর তথ্য অনুসারে যারা বার্ষিক পরীক্ষায়
পুরস্কৃত হয়েছিল তাদের নামের তালিকাঃ
প্রথম বছরে
পুরস্কৃত ছাত্ররাঃ শিবচন্দ্র কর্মকার, নবীন চন্দ্র পাল, জে সি সাইমনসন, ঈশান
চন্দ্র গাঙ্গুলি, ডবলিউ ফয়, ঈশান চন্দ
দত্ত, রাজাকৃষ্ণ দেব, অমর চরণ শেঠ, শ্যামাচরন দাস, দ্বারকানাথ গুপ্ত, গোবিন্দ
চন্দ্র গুপ্ত, বেনিমাধব মজুমদার, জেমস পাট।
দ্বিতীয় বছরে
পুরস্কৃত ছাত্ররাঃ রাজাকৃষ্ণ দে, ঈশ্বরচন্দ্র গাঙ্গুলি, শ্যামাচরন দত্ত,
রামঅনারায়ন দাস, ঈশ্বরচন্দ্র দত্ত, পঞ্চানন শিরোমণি, উমাচরন শেঠ, যাদব ধর,
নবীনচাঁদ মিত্র, দ্বারকানাথ গুপ্ত, রামকুমার দত্ত, কালিদাস মুখার্জি, আর জি হেমিন
ও পরমানন্দ শেঠ।
তৃতীয় বছরে
পুরস্কৃত ছাত্ররাঃ উমাচরন শেঠ, দ্বারকানাথ গুপ্ত, রাজকৃষ্ণ দে, নবীনচন্দ্র মিত্র ও
শাম্যাচরন দত্ত।
মূল গোলমাল বাঁধল
অন্য যায়গায়। সেকালে বাঙালি হিন্দু ব্যক্তিরা মৃতদেহ স্পর্শ করতনা এমনকি যেখানে
মৃতদেহ রাখাহত সেইস্থান পরিষ্কার করার জন্য গোবর জল দিয়ে ধোয়া হত। কিন্তু
অ্যানাটমি শিক্ষার জন্য মৃতদেহ কাটতে হত।
হিন্দু ছাত্ররা এই শব কাটার বিরোধিতা করল। এইসময় সবথেকে সাহসিকতার কাজ
করলেন অধ্যাপক মধুসূদন গুপ্ত। তিনি ছাত্রদের জড়তা ও ভয় কাটাবার জন্য ১৮৫৬সালের
জানুয়ারি মাসে মধুসূদন গুপ্ত তার ৪জন ছাত্রকে নিয়ে সকলের সামনে শব ব্যবচ্ছেদ করেন। বাঙালির ইতিহাসে এবং কলকাতার চিকিৎসা বাবস্থার ইতিহাসে এটা একটা
গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী কাজ। কথিত আছে
যে এই সাহসিকতার জন্য তোপধ্বনির মাধ্যমে তাঁদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
১৮৬০এর দশকের
গোড়ার দিকে দুজন বাঙালি প্রথম চিকিৎসাশাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি এম.ডি পান। তারা
হলেন ভোলানাথ বসু এবং মহেন্দ্রলাল সরকার।
১৮৮৪ সালের জুলাই
মাসে স্যার অ্যাশলে ইডেন ভারতীয় নারী ও
শিশুদের জন্য আলাদা বিভাগ তৈরি করেন যে বিভাগে তিনি কর্মী থেকে ডাক্তার সকলই ছিলেন মহিলা।
এই মেডিকেল কলেজ
আজও তার কর্তব্যে অবিচল।
কলকাতার শিক্ষা
বাবস্থা নিয়ে অনেক তো কথা হল। শিক্ষা বাবস্থার বিকাশের ইতিহাস এখানেই শেষ করছি।
কিন্তু শিক্ষা বাবস্থাকে এত সহজে ছেড়ে আমি দিচ্ছিনা। পরের সিরিজে আমাদের দেশের কিছু
পণ্ডিত যারা সংস্কৃত, দর্শন এবং বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের কথা বলবো।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
0 Comments:
Post a Comment