history of school establishment to spend the women's education(নারী শিক্ষার প্রসারে কলকাতায় স্কুল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস)

HISTORY OF SCHOOL ESTABLISHMENT TO SPEND THE WOMEN EDUCATION IN KOLKATA



কলকাতাতে ছেলেদের শিক্ষা ব্যাবস্থা বিকাশের সাথে প্রায় সমান্তরাল ভাবেই নারী শিক্ষার বিকাশ হতে থাকে কলকাতাতে। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকেই খ্রিষ্টান মিশনারিদের দ্বারা নারী শিক্ষার বিকাশের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা হতে থাকে। কলকাতাতে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষা বিকাশের জন্য ‘দি ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি ফর দি এষ্টাবলিশমেন্ট এন্ড সাপোর্ট অফ বেঙ্গলি ফিমেল স্কুল।’ নামে একটি খ্রিষ্টান মহিলা সমিতি গঠন করা হয়। এই সোসাইটি নন্দনবাগান অঞ্চলে প্রথম বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করে। এরপর থেকে এরা জানবাজার, চিৎপুর, শ্যামবাজার, বরানগর প্রভৃতি অঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করতে থাকে। ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে নারী শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাবার জন্য “স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক” পুস্তকটি প্রকাশ করাহয়। ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজা বৈদ্যনাথ রায় ২০০০০ টাকা ব্যায় করে হেদুয়ার পূর্ব দিকে ‘সেন্ট্রাল স্কুল’ নামে একটি বালিকা বিদ্যালায় স্থাপন করেন।

কিন্তু এইসকল স্কুলে শুধুমাত্র সাধারণ নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়েরা পড়তে যেত। সম্ভ্রন্ত ঘরের মেয়েরা কি অশিক্ষিত থাকত? না। তারাও অনেক উচ্চ মানের পড়াশুনা শিখত। সেই সময় যেহেতু সম্ভ্রন্ত ঘরে পর্দা প্রথা প্রচলিত ছিল সেহেতু মেয়েদের বড়ির ভেতরেই রেখে শিক্ষক মারফত পড়াশুনা শেখান হত। এই শিক্ষা ব্যাবস্থা কে বলাহত বৈষ্ণবী শিক্ষা ব্যাবস্থা। এই শিক্ষা ব্যাবস্থাতেই শিক্ষা লাভ করে রাজা শিবচন্দ্র রায়ের মেয়ে হরসুন্দরি দেবী বাংলা, সংস্কৃত এবং হিন্দি ভাষায় বিশেষ পাণ্ডিত্য লাভ করেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির মেয়েরাও এই প্রথায় শিক্ষা লাভ করতো।

বেথুন সাহেব ১৮৪৮ সালে ভারতের আইন পরিষদের সদস্য এবং কাউন্সিল অফ এডুকেশনের সভাপতি হয়ে কলকাতায় আসেন এবং কাউন্সিল অফ এডুকেশনের সদস্য রামগোপাল ঘোষকে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা জানান রামগোপাল ঘোষ তার বন্ধু দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় কে এই পরিকল্পনার কথা জানলে তিনি তার সিমলা স্ট্রীটের বৈঠকখানা বাড়িটি বিনা ভাড়ায় স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন। এছাড়াও আধ বিঘা জমি এবং ১০০০ টাকাও দান করেন। ১৮৪৯ সালের ৭ই মে স্কুলটি ‘নেটিভ ফেমেল স্কুল’ নামে তার যাত্রা শুরু করে। ১৮৫০সালের ৬ই নভেম্বর হেদুয়ার পশ্চিম দিকের ভূমিতে বর্তমান “বেথুন স্কুল” এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয়। স্কুলের নতুন ভবনের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বেথুন্ সাহেব মারা যান। কিন্তু তিনি তার সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি স্কুলের নামে উইল করে রেখে যান। বেথুন সাহেব মারা যাবার পর এই স্কুলের ব্য্যভার সরকার গ্রহন করে। ১৮৫০-১৮৬৯ সাল পর্যন্ত এই স্কুলের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বিদ্যাসাগার মহাশয়। এছাড়াও এই স্কুলের অপর একজন শুভানুধ্যায়ী ছিলেন মদনমোহন তর্কালঙ্কার। এই বেথুন স্কুলেই প্রথম কলকাতার সম্ভ্রন্ত ঘরের মেয়েরা পড়তে আসত। তাদের মূলত গাড়ি করে নিয়ে আসা হত এবং পুনরায় গাড়ি করে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে আসা হত।

এরপর থেকে ছেলেদের সাথে সমান পাল্লা দিয়ে মেয়েরাও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যাবস্থায় উন্নতি লাভ কতে থাকে। ১৮৫৭সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার ২৩ বছর পর ১৮৭৮ সালে বেথুন স্কুল থেকে কাদম্বিনি বসু এবং সরলা বোস বিশ্ববিদ্যালায়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার জন্য অনুমতি পায় এবং এই পরীক্ষায় কাদম্বিনি বসু পাস করেন এবং ১৮৭৯ সালে শুধুমাত্র তাকে নিয়েই বেথুন স্কুলের কলেজ বিভাগ খোলা হয়। এই সময় শুধুমাত্র হিন্দু মেয়রাই বেথুন কলেজ পড়ার সুযোগ পেত। এই সময় চন্দ্রমুখী বসু এই কলেজে পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন কিন্তু তিনি খ্রিষ্টান বলে এই কলেজে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এরপর তিনি চার্চ নর্মাল স্কুলে এফ.এ পরা শুরু করেন। ১৮৮০ সালে মিস অ্যালেন ডি অ্যাব্রু নামে এক খ্রিষ্টান ছাত্রী বেথুন কলেজে পড়ার অধিকার পেলে চন্দ্রমুখী বসু বেথুন কলেজে যোগদান করেন এবং ১৮৮৩ সালে বি.এ এবং ১৮৮৪ সালে ইংরাজিতে অনার্স সহ এম.এ পরীক্ষাতে পাস করন। চন্দ্রমুখী বসু প্রথম বাঙালি মহিলা যিনি এম.এ পরীক্ষাতে পাস করেন। এরপর তিনি বেথুন কলেজেই শিক্ষিকা হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৮৮৬ সালে বেথুন কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে আসার পর চন্দ্রমুখী বসুকে এই কলেজের প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে নিয়োগ করা হয়।
১৮৮৩ সালে কাদম্বিনি বসুর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর তিনি মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ার জন্য ভর্তি হন। এইসময় আরও ২জন বাঙালি ছাত্রী তার সাথে ডাক্তারি পড়া শুরু করন, তারা হলেন ভার্জিনিয়া মেরী বসু এবং বিধুমুখী বসু। ১৮৮৮সালে অনুষ্ঠিত প্রথম এম.বি (তৎকালীন এম.বি.বি.এস)পরীক্ষায় কাদম্বিনী বসু বাদে সকলেই পাস করেন। কিন্তু কাদম্বিনী বসুকে মহিলাদের স্পেশাল সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এরপর কিছুদিন ডাক্তারি করার পর ১৮৯২ সালে তিনি বিলেত যাত্রা করেন। এবং কিছু বছরের মধ্যেই এল.আর.সি.পি(এডিনবরা), এল.আর.সি.এস(গ্লাসকো) এবং ডি. এফ.পি.এস(ডাবলিন) উপাধি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিন লেডি ডাফরিন হসপিটালে ডাক্তারি করেন তার পর নিজে স্বাধীন ভাবে ডাক্তারি শুরু করেন। ইনিই প্রথম বাঙালি এবং দ্বিতীয় ভারতীয় মহিলা ডাক্তার এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম ভারতীয় নারী বক্তা

শুধুমাত্র কলকাতাতেই থেমে থাকেনি নারী শিক্ষার প্রসার। কলকাতার নিকটবর্তী অনেক স্থানেই অনেক মনিষী বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন এবং কিছু স্কুল আজও সফলতার সাথে নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এর মধ্যে বারাসাত এর কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় অন্যতম।১৮৪৭ সালে কালীকৃষ্ণ মিত্র নারী শিক্ষার প্রসারে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৯ সালে সরকারি সাহায্যে বারাসাতে আরও একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় যার বর্তমান নাম বারাসাত উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, আজ ৮০বছর পরও এই স্কুল সুনামের সাথে শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে।

পরের পর্বে বলবো মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা। একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ।।

অজানা কলকাতা টুইটার (ojana Kolkata in twitterhttps://twitter.com/KolkataOjana?lang=en

অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour

1 comment: