PRINSEP GHAT KOLKATA- HISTORY AND THE JOURNEY OF JAMES PRINSEP IN KOLKATA
প্রিন্সেপ ঘাট কলকাতার প্রেমের হেরিটেজ সাইট। কলকাতায় কোন বাঙালি প্রেম করেছে
অথচ প্রিন্সেপ ঘাট যায়নি এমন যুগল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ব্রিটিশ আমলে প্রিন্সেপের
নামে তৈরি এই ঘাট তো আর প্রেমের জন্য তৈরি হয়নি, তৈরি হয়েছিল ইংরেজ সাহেবদের
গঙ্গার হাওয়া খাওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা পালটে হয়ে গেলো গঙ্গার হাওয়া সাথে ফুচকা আর
ঝালমুড়ি খেতে খেতে প্রেমের জায়গা। কি যুগ পড়ল ভাই।
সে যে যা পারে করুক কিন্তু এই প্রিন্সেপ টা কে ভাই?
আরে চিন্তা করছেন কেন? কে এই প্রিন্সেপ সেটা বলার জন্যই তো লিখতে বসেছি।
আমরা বইয়ের পাতা থেকে সিনেমার পর্দা সবজায়গায় ব্রিটিশদের অত্যাচারের কথা পড়েছি
এবং শুনেছি কিন্তু আমন অনেক সাহেব ছিলেন যারা আমাদের দেশ কে ভালবেসে আমাদের দেশের
ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। এইসকল সাহেবদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জেমস প্রিন্সেপ।
জন্ম ২০শে অগাস্ট ১৭৯৯। তাঁর বাবা ছিলেন জন প্রিন্সেপ ভারতের নীলকর সাহেব। ১৮১৯
খ্রিষ্টাব্দে ১৫ই সেপ্টেম্বর মাত্র ২০ বছর বয়সে মিন্টে(টাকশাল) অ্যাসেই মাস্টারের
চাকরি নিয়ে কলকাতায় আসেন। সোনা এবং রুপোর কয়েন পরীক্ষা করাই তাঁর কাজ। কিন্তু তাঁর
মূল ইন্টারেস্ট তো আঁকা এবং ভারতের ইতিহাস নিয়ে। কাজের সুত্রে বদলি হয়ে গেলো বেনারসে।
প্রথমেই বানিয়ে ফেললেন গোটা শহরের ম্যাপ আর কয়েক বছরে আঁকলেন দেশের গুছ গুছ
মনুমেন্টের ছবি। এখানেই কি শেষ? না একই সাথে শুরু করেছিলেন কয়েন কালেকশন। গুপ্ত,
কুশান, মৌর্য যুগ মিলিয়ে প্রায় কয়েকশো কয়েন তাঁর কালেকশনে ছিল। শুধু কালেকশন নয় সব
কয়েন-এর ইতিহাস, বিশিষ্ট সব খুঁটিনাটি নিয়ে লিখেছেন বিস্তর আর্টিকেল।ফলস্বরূপ
এশিয়াটিক সোসাইটির কয়েন এবং পুঁথি বিষয়ক জার্নালের সম্পাদকের পদও লাভ করেন।
বেনারসে থাকাকালীন সেখানে তৈরি
করেছিলেন একটি টাকশাল এবং একটি চার্চ। ১৮৩০ সালে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন ডেপুটি
অ্যাসেই মাস্টার পদে পদন্নোতি পেয়ে। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর নির্দেশেই ভারতে ওজন
পরিমাপ ব্যবস্থার সংস্কার হয় এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাঁর নতুন অভিন্ন রুপার
মুদ্রা চালু করেন যা দেশের সব স্থানে সমান ভাবে প্রচলিত হয়।
কিন্তু ভারতের ইতিহাসে তাঁর মূল অবদান অশোকের শিলালিপির পাঠোদ্ধার। ৩০০
খ্রিস্টপূর্বাব্দে আশক তাঁর জীবনের সমস্ত কথা এবং বৌদ্ধবানী ভারতের নানা স্থানে
ব্রহ্মনি এবং খারোস্টি ভাষায় শিলালিপি হিসাবে লিখে গেছেন।
১৮৩৬ সালে নরওয়ের পণ্ডিত
ক্রিশ্চিয়ান ল্যাসেন ইন্দো-গ্রীক
রাজা আগাথোকলস এবং পান্তালিওনের দ্বিভাষিক গ্রিক-ব্রহ্মী মুদ্রা ব্যবহার করে
কয়েকটি ব্রাহ্মনি অক্ষর চিহ্নিত করতে
সমর্থ হন। এর পর ১৮৩৬-১৮৩৮সালের মধ্যে জেমস প্রিন্সেপ সারা ভারতের প্রায় সব
ব্রাহ্মনি ভাষার শিলা লিপি পাঠদ্ধার করেন।আমরা সময়ে বলি “ASHOKA THE GRATE”- কোন মাহাত্ম্যই যে আমরা জানতে পারতাম না জেমস
প্রিন্সেপ না থাকলে।
কিন্তু সুখ স্থায়ী হয়না। সারাদিন কাজ আর পড়াশোনার জন্য
কলকাতায় কাজ করার সময় থেকেই শুরু হয়েছিল প্রচণ্ড মাথার ব্যাথা। কিন্তু তবুও কাজ
করে চলেছেন না থেমে। অবশেষে ১৮৩৮ সালের শেষের দিকে অসুস্থতা বারাবারি রকমের বৃদ্ধি
পেলে তিনি ইংল্যান্ডে তাঁর বোনের কাছে ফিরে যান। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে ২২শে এপ্রিল
মাত্র ৪১ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে তাঁর বোনের বাড়িতে তিনি মারা যান।
১৮৪১ সালে তাঁর অনুগামীরা তাঁর স্মৃতির উদ্যেশে তৈরি
শুরুকরেন প্রিন্সেপ ঘাট ১৮৪৩ সালে নির্মাণ শেষ হলে তা সর্বসাধারণের জন্য খুলে যায়।
যদিও এই ঘাটে ব্রিটিশদের আধিপত্যই ছিল বেশি। যদিও স্বাধীনতার পরে দীর্ঘদিন অযত্নে
পড়েছিল এই ঘাটটি। কিন্তু সরকারের সচেতনতায় সেই ঘাটের সংস্কার করা হয় এবং কলকাতার
হেরিটেজ স্থান গুলোর মধ্যে এই প্রিন্সেপ ঘাট অন্যতম। আর তাঁর সাথে বাঙালির প্রেমের
হেরিটেজ সাইট-এর তকমাতো বাঙালি দায়িত্ব নিয়ে জুড়ে দিয়েছে।
কিন্তু ঘাট বলছি তো নদী এত দূরে কেন? এই সময়ের ম্যাপ
অনুসারে গঙ্গার প্রবাহ আজকের স্ট্যান্ড রোডের জায়গাতেই ছিল গঙ্গার প্রবাহ এবং
বাঁধানো সিঁড়ি ছিল গঙ্গা অবধি। সময়ের সাথে সাথে ভৌগোলিক নিয়মে সরে গিয়েছে গঙ্গা।
এরপর প্রিন্সেপ ঘাটে গেলে অন্তত একবার মনে করবেন জেমস
প্রিন্সেপ-এর কথা যিনি পালটে দিয়েছিলেন ভারতের প্রাচীন ইতিহাসকে। অবশ্যই প্রেমটাও
করবেন। ইতিহাস জানা ভাল কিন্তু ইতিহাসের চক্করে পরে প্রেম খোয়ানো মটেও ভাল নয়।
0 Comments:
Post a Comment