establishment of schools in kolkata: for English education
১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে
শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান মিশনারিরা প্রথম বিদ্যালয় স্থাপনের বাবস্থা করেন ঠিক এই
বছরই কলকাতায় কম্পানির সিভিলিয়ানদের জন্য ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। এই
কলেজ কলকাতার প্রথম কলেজ কিন্তু ভারতের প্রথম পুর্নাঙ্গ কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় ১৭৯২
সালে বেনারসে মূলত সংস্কৃত শিক্ষার জন্য। কিন্তু ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা,
আরবি, ফারসি, ইংরাজি, সংস্কৃত প্রভৃতি ও প্রাচ্যের ইতিহাস পড়ানোর জন্য দেশের
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্ডিতদের সমবেত করাহয় এবং একই সাথে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্যও
উপযুক্ত বাবস্থা করা হয়। এরপর ১৮১৪ সালে মহারাজা জয়নারায়ন ঘোষাল নিজ বাসভবনে একটি
স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর রামমোহন নাপিত, জগমোহন বসু, ভুবন দত্ত, কৃষ্ণ মোহন বসু
প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন। কিন্তু স্কুল গুলিতে ছিল বইয়ের
অভাব। এই অভাব দূর করা এবং দেশবাসির জ্ঞান বিস্তারে সহায়তা করার জন্য ১৮১৭ সালে
“কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি” এবং ১৮১৮সালে “কলকাতা স্কুল সোসাইটি” প্রতিষ্ঠা করাহয়।
প্রথমেই তাদের উদেশ্য ছিল নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং পাঠশালার আধুনিকীকরণ। সোসাইটি খ্যাতনামা পণ্ডিত গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার মহাশয় কে
সমস্ত পাঠশালার ছাত্র সংখ্যা, নাম , জাতি প্রভৃতি নথিভুক্তও করণের তদারকির দায়িত্ব
দেওয়া হয়।
১৮১৭ সালের ২০শে
সেপ্টেম্বর হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করাহয়। মূল উদ্যোগী ছিলেন ডেভিড হেয়ার। হেয়ার
শুধু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থকেননি, কলেজ আশা সমস্ত মেধাবী ছত্রদের তিনি বাড়ি
বাড়ি গিয়ে লেখাপরায় সাহায্য, অর্থ সাহায্য, এমনকি অসুস্থ ছাত্রদের নিজে হাতে সেবা
করতেন। এছাড়া ছিল নিয়মিত উপস্থিতির জন্য পুরষ্কার। ১৮২৪ সালে তিনি একটি চিঠিতে
উল্লেখ করেন যে “প্রথমে যেসব ছাত্ররা শিক্ষার আলো দেখবে তারই ভবিষ্যতে নতুন করে
শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে।”। তার এই কথা সত্যি হয়েছিল, অনেক ছাত্র হিন্দু কলেজ থেকে
পাস করে তারাই আবার স্কুল প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়।
১৮২১সালে ২১শে
অগাস্ট ২৫০০০টাকা ব্যায়ে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় “গভঃ সংস্কৃত কলেজ”। এই কলেজ
সংস্কৃত শিক্ষার সাথে ইংরাজি ও পাশ্চাত্য শিক্ষার ব্যাবস্থাও করা হয়। ১৮২৪ সালে
২৫শে ফেব্রুয়ারি গোলদীঘির উত্তরে এই কলেজ এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয়। এবং ১৮২৬
সালে ১মে কলেজ তার গোলদিঘির নবনির্মিত বাড়িতে চলে আসে এর আগে এই কলেজ এর পঠনপাঠন
চলত ৬৬নং, বউবাজার স্ট্রীটে। কিন্তু এই কলেজে ব্রাহ্মন ও বৈদ্য সন্তান ও ১২ বছরের
কম বয়সের কেউ ভর্তি হতে পারতোনা এবং টানা ১২ বছর অধ্যায়ন করতে হত। ১৮৫১-১৮৫৪ সালের
মধ্যে বিদ্যাসাগার মহাশয়ের চেষ্টায় এই কলেজ এর দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত হয়।
১৮২৬ সালে ১মে
হিন্দু কলেজ ও তার নতুন বাস ভাবনে উঠে আসে এবং তখনই হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও
নামে এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ইংরাজি ও ইতিহাস এর শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি শিক্ষকতার
সময়ে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ধারণা ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে নবজাগরনের দীপ প্রজ্বলন
করেন। তার অনুগামীরা পরিচিত হয় ইয়ং বেঙ্গল নামে। তার উনুগামী ৮ জন খ্যাতনামা
ছাত্ররা হলেন কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায়, রাসিককৃষ্ণ মল্লিক, রামগোপাল ঘোষ, রামতানু
লাহিড়ী, রাধানাথ সিকদার, প্যারিচাদ মিত্র, শিবচন্দ্র দেব, ও দক্ষিণারাঞ্জন
মুখোপাধ্যায়। এনারাই পরবর্তী কালে ভারতে প্রগতিমূলক আন্দোলনের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে।
১৮২১ সালে
সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটির ইউরোপিয় সেক্রেটারি
ডেভিড হেয়ার ও নেটিব সেক্রেটারি রাধাকান্ত দেব ৮ই জুন একটি রিপোর্ট পেশ করে, যা
থেকে আমরা জানতে পারি যে কলকাতায় ছোট-বড় মিলিয়ে স্কুল ছিল মোট ২১১টি ও ছাত্র
সংখ্যা ছিল ৪৯০০ জন। এই সকল ছাত্রদের পরীক্ষা হত শুভাবাজারের গোপীমোহন দেবের
বাড়িতে। ভাল ফল করলে ছাত্র ও গরমশাই উভয়কেই পুরস্কৃত করা হত।
এইসময় থেকেই
কলকাতার বিশেষ কিছু মহলে কথা উঠতে থাকে যে ইউরোপীয়দের দ্বারা গঠিত স্কুলে
মিশনারিদের প্রভাব পড়ছে। এই বিষয় থেকে বাঙালিকে মুক্ত করার জন্য ১৮২৩ সালে ১১ই
ডিসেম্বর রাজা রামমোহন রায় নিজ খরচে “অ্যাংলো হিন্দু স্কুল” স্থাপন করেন। ১৮২৯
সালে গৌরমোহন আঢ্য মিশনারি প্রভাব মুক্ত কিন্তু ইংরাজি শিক্ষার জন্য “ওরিয়েন্টাল
সেমিনারি” একটি বিদ্যালায় স্থাপন করেন। এই স্কুলে সাংবাদিক গিরিশ চন্দ্র ঘোষ,
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উমেশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ মনিষীরা শিক্ষা লাভ করেছেন।
গৌরমোহন নিছু ক্লাসের জন্য ইংরেজ শিক্ষক, মাঝের ক্লাসের জন্য বাঙালি শিক্ষক ও উঁচু
ক্লাসের জন্য ইংরেজ ও বাঙালি উভয় শিক্ষকই নিয়োগ করতেন। কারণ তার মূল উদেশ্য ছিল
ইংরাজি শিক্ষার সাথে সাথে দেশীয় ভাষা শিক্ষাতেও জোর দাওয়া।
বিনা মুল্যে
ইংরাজি শিক্ষার জন্য “হিন্দু ফ্রি স্কুল” স্থাপিত হয় ও ১৮৩৩ সালে মতিলাল শীল
“শীল’স ফ্রি কলেজ” স্থাপন করেন। প্রথমে এই কলেজ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধিনে ছিল
কিন্তু মতিলালার সাথে মতবিরোধ হওয়াতে ১৮৪৬সালে তিনি এই কলেজের পরিচলন ভার নিজে
গ্রহন করেন এবং ইহুদি শিক্ষক নিয়োগ করে ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষার ব্যাবস্থা করেন।
১৮৫৩ সালে “হিন্দু মেট্রোপলিটান কলেজ” স্থাপনেও মতিলাল শীল অর্থ সাহায্য করেন।
১৮৩৫ সালে ইংরেজ
সরকার ইংরাজি শিক্ষার আনুকুল্যের নীতি গ্রহন করার পর সরকারি সাহায্যে স্কুল ও কলেজ
স্থাপন হতে থাকে। ও প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও কলেজ গুলিতে অর্থ সাহায্যের বাবস্থা করা
হয়।
১৮৩৯ সালে প্রথম
হিন্দু কলেজের পাঠশালা বিভাগ খোলা হয় ও সংস্কৃত কলেজের সংলগ্ল স্থানে নতুন ভবন
তৈরি করা হয়। এই স্কুলে ১২ বছরের অধিক কোন ছাত্র ভর্তি হতে পারতনা। প্রথম বর্গের
ছত্রদের বার্ষিক বেতন ছিল ২ টাকা, দ্বিতীয় বর্গের ৪ টাকা ও তৃতীয় বর্গের ছিল ৮
টাকা। পাঠ্য পুস্তক বিনামুল্যে স্কুল থেকে দেওয়া হত।
১৮৪০ সালে স্কুল
সোসাইটির দুজন গুরুত্ব পূর্ণ সদস্য ব্যারেটো এন্ড কোম্পানি এবং ম্যাকিনটশ এন্ড
কোম্পানির বিপর্যয়ের ফলে পটলডাঙ্গা ইংরাজি স্কুল এবং আরপুলির বাংলা স্কুল বাদে
প্রায় সব স্কুল উঠে যায়। এই দুটি স্কুল হেয়ার নিজের অধিনে নিয়ে পরিচালনা করতে
থাকলেন। বারতমানে এই দুটি স্কুল মিলিত হয়ে বর্তমানে হেয়ার স্কুলের উদ্ভব হয়েছে।
১৮৫০এর দশকে
তৎকালীন বিখ্যাত বাইজী হিরাবুলবুলের পুত্র বেশ্যানন্দন, যবন এবং খ্রিস্টান বালকগন
হিন্দু কলেজে ভর্তি হলে কলকাতার ধনী হিন্দুগন ঐ কলেজ থকে তাদের নিজেদের ছেলেদের
ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন এবং হিন্দু মেট্রোপলিটান কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। এই কলেজ
তৈরির জন্য মতিলাল শীল এবং রানী রাসমণি(১০০০০ টাকা) অর্থ সাহায্য করেন। ২মে ১৮৫৩
সালে রামগোপাল মল্লিকের বাড়িতে এই কলেজের পঠনপাঠন শুরু হয়। পরবর্তীকালে মতিলাল
শীলের কলেজ ও গুরুচরন দত্তের ডেভিড হেয়ার একাডেমী এই কলেজের সাথে সংযুক্ত হয়।
শীল’স ফ্রি কলেজ ১৮৫৮ সালে পুনরায় হিন্দু মেট্রোপলিটান কলেজ থেকে বিমুক্ত হয়।
১৮৫৭ সালে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালায় স্থাপনের পর দেশের তথা
কলকাতার শিক্ষা ব্যাবস্থা দ্রুত উন্নতি লাভ করতে থাকে। ১৮৫৪ সালে হিন্দু কলজের নাম
পাল্টে হয় প্রেসিডেন্সি কলেজ। ১৮৫৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক প্রথম বি.এ পরীক্ষা
প্রবর্তিত হয় ও এই পরীক্ষায় পাস করেন মাত্র ২জন। বাঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও
যদুনাথ বসু।
শুধুমাত্র
কলকাতাতেই শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়নি কলকাতার আশেপাশে অনেক স্কুল
স্থাপন হয়েছে যার মধ্যে অনেক স্কুল সুনামের সাথে আজও শিক্ষার প্রসার করে চলেছে।
যার মধ্যে বারাসাত পি.সি.এস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম। ১৮৪৬ সালে প্যারিচরন
সরকার এবং বিদ্যাসাগার মহাশয়ের প্রচেষ্টায় পরিত্যক্ত জেলখানয় এই স্কুলের সূত্রপাত।
আজও সফলতার সাথে এই স্কুল শিক্ষার আলো প্রচার করে চলেছে। আমি নিজেও এই স্কুলের
প্রাক্তন ছাত্র।
কলকাতার শিক্ষা
বাবস্থার উন্নতিকল্পে অনুদান তথ্যঃ
জেনারেল ক্লড
মার্টিন বিনামুল্যে শিক্ষা প্রদান এবং বিদ্যালায় স্থাপনের জন্য ৩৩লক্ষ টাকা দান
করেন। এই দান থেকেই লা-মার্টিনিয়ের কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়(১৮৩৩-৩৫)।
১৮২৫ সালে
কালীশঙ্কর ঘোষাল ‘শিক্ষার উপকারার্থে’ ২০০০০ টাকা দান করেন।
১৮২৬ সালে
গুরুপ্রসাদ বসু ১০০০০ টাকা দান করেন।
রাজা শিবচন্দ্র
রায় ও রাজা নৃসিংহ চন্দ্র রায় ‘বিদ্যাসম্পরর্কীয় উপকারার্থে’ ১লক্ষ৪হাজার টাকা দান
করেন।
কিন্তু এই ব্লগে ইতিহাস বলতে বলতে তো শুধু
ছাত্রদের কথাই বলে গেলাম কিন্তু কলকাতাতে নারী শিক্ষার প্রসারও হয়েছিল সমান ভাবে। একটু
অপেক্ষা করুন বলবো সেই কথা পরের ব্লগে।
0 Comments:
Post a Comment