স্কুল প্রতিষ্ঠার আদিপর্বঃ
কলকাতায় এসে যারা বসবাস শুরু করেছিলেন তারা সকলেই কোন না কোন গ্রাম থেকে এসেছিল।
গ্রাম থেকে যেমন সাধারন কুমোর, কামাররা এসেছিলো তেমনি এসেছিলেন বামুন-পুরুত,
নাপিত, জ্ঞানী ব্যক্তি সকলেই। শহর কলকাতায় আসার সময় শুধু তারা নিজেরা আসেননি সাথে
এনেছিলেন দেশের সনাতন শিক্ষা ব্যাবস্থা। সনাতন শিক্ষা ব্যাবস্থায় হিন্দু ধর্মের
মধ্যে ছিল চতুষ্পাঠী বা টোল এবং পাঠশালা। মূলত ব্রাহ্মণদের দ্বারা মূলত টোল বা চতুষ্পাঠী শিক্ষাদান করা হত। পাঠশালায় যেকোনো জাতির লোকেরা শিক্ষাদান করতে পারত তাদের
বলাহত গুরুমশাই। এইসব পাঠশালায় ছেলে মেয় সকলেই পড়তে পারত। ১৮৮৬ সালে প্রকাশিত
রাসসুন্দরির “আমার জীবন” গ্রন্থে এই পাঠশালায় মেয়েদের পড়ার উল্লেখ আছে। মজার কথা
হল পাঠশালাতে শিক্ষা বাবস্থা চলত বেশ কড়া শাসনে এবং পড়ার গাফিলতিতে শাস্তি দানের
প্রচলন বিশেষ ভাবে ছিল যা বর্ননা আমরা উনবিংশ শতকের প্রায় সব বাংলা উপন্যাসেই
দেখতে পাই।
এইসকল পাঠশালায় মূলত প্রাথমিক
লেখাপড়া, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষার শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করাহত। বিংশ
শতাব্দীর শেষ অবধি এইসকল পাঠশালা কলকাতার আশেপাশের গ্রামে টিকেছিল কিন্তু তা
বর্তমানে সরকারি সাহায্যে প্রথমিক বিদ্যালয় এর রূপ ধারন করেছে।
হিন্দু ধর্মের
মতো ইসলাম ধর্মেও সনাতন শিক্ষা ব্যাবস্থার উল্লেখ আছে। এই ধর্মে মুসলমান পণ্ডিত বা
মৌলবিদের দ্বারা বিদ্যা চর্চা চলত। এই সকল প্রতিষ্ঠান কে বলাহত মাদ্রাসা।
কলকাতায় প্রথম
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাঃ ১৭৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার শিক্ষিত পদস্ত মুসলমানরা হেস্টিংসের
কাছে কলকাতাতে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার দাবি জানান যাতে মুসলমান ছেলেমেয়রা ইসলাম
আইন শিখে সরকারের কাজে সাহায্য করতে পারে। এবং তারা মুসলমান পণ্ডিত মজিদউদ্দিনকে
সেই মাদ্রাসার প্রধান করার কথাও বলেন। তখনও ভারতে মুঘল শাসনের পূর্ণ অবসান ঘটেনি
ফলে ইসলাম আইন জানা লোকের বিশেষ প্রয়োজন সর্বোপরি শিক্ষা অনুরাগী হেস্টিংস
মাদ্রাসা গঠনের দাবি মেনে নিলেন। বর্তমান বৈঠকখানা বাজারের নিকট পদ্মপুকুরে ৫৬৪১
টাকা খরচ করে একটি জমি কিনে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলেন। এবং মাসে ৬২৫ টাকা খরচ করে
মাদ্রাসা চালাতে লাগলেন। ১৭৮০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছরের এপ্রিল অবধি হেস্টিংস
নিজের খরছে মাদ্রাসা চালালেন। ১৭৮১ সালের এপ্রিলে হেস্টিংস কোম্পানির কাছে
মাদ্রাসার স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য অনুদান চান। কোম্পানি মাদ্রাসা গঠনকে সমীচীন
মনে করে কোম্পানি এতদিনের মাদ্রাসার খরচ বাবদ ১৫২৫১ টাকা ও জমি কেনা বাবদ ৫৬৪১
টাকা হেস্টিংসকে মিটিয়ে দেয় ও মাদ্রাসার জন্য যাবতীয় খরচ কোম্পানির তহবিল থেকে
করার অনুমিতি দেয়।
মাদ্রাসাটি প্রথম
যে স্থানে স্থাপন করা হয় সেটি অস্বাস্থ্য কর বলে বিবেচিত হয় তাই ১৮২৩ সালের জুন
মাসে মাদ্রাসার নতুন ভাবন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। ১৮২৪ সালের ১৫ই জুলাই
নতুন মাদ্রাসার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় মুসলিম অধ্যুষিত কলিঙ্গাতে (বর্তমান
ওয়েলেসলী স্ট্রীটে)। ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দ এর অগাস্ট থেকে এখনে নিয়মিত ভাবে পঠনপাঠন
শুরু হয়। মাদ্রাসার নতুন ভবন তৈরির জন্য সরকার ব্যায় করে ১,৪০,৫৩৭ টাকা। এই
প্রতিষ্ঠানের বর্তমান নাম “ক্যালকাটা মাদ্রাসা”
কলকাতাতে
মাদ্রাসা, পাঠশালা, চতুষ্পাঠী তো অনেক ছিল, কিন্তু এতে তো শুধু সনাতনী ও ধর্মীও
শিক্ষালাভই সম্ভব ছিল। কিন্তু কলকাতা বাসীকে তো ইংরাজি শেখাতে হবে। উনবিংশ শতকের
শুরুতেই ইংরাজি শিক্ষার জন্য স্কুল কলেজ স্থাপন করা হয়েছিল। জানতে চান সেই ইতিহাস?
অপেক্ষা করুন পরের ব্লগেই বলব সেই ইতিহাস।
অজানা কলকাতা টুইটার (ojana Kolkata in twitter) https://twitter.com/KolkataOjana?lang=en
অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour
অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour
0 Comments:
Post a Comment