হারিয়ে যাওয়া নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ্‌ এবং তার চিড়িয়াখানা(forgotten nawab Wajid Ali Shah and his zoo)



ব্যাক্তিগত চিড়িয়াখানা। ভাবতে পারেন

আবার তাতে বাঘসিংহসাপ সবছিল?

অবাক লাগছে


তাহলে পড়ে ফেলুন সব সংশয় দূর হয়ে যাবে।

১৮৫৭ সাল, সারাদেশ জুড়ে জ্বলছে সিপাহী বিদ্রোহের আগুনএরই মধ্যে লখনউএর শেষ নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করল ইংরেজ সরকারএমনকি তাকে নিজের রাজ্য লখনউ থেকে সরিয়ে এনে রাখা হল মেটিয়াবুরুজেএখন আর নেই নবাবি শাসন, লখনউএর নবাব এখন পেনশন ভোগী ইংরেজদের ভৃত্যকিন্তু তাতে কি আর নবাবি মেজাজ লুপ্ত হয়? কলকাতাতে এসেও সেই একই মেজাজে শুরু করলেন তার সখ মেটানোতার শখ বলতে ছিল খাওয়া, গান, ইমারত তৈরি জানোয়ারলখনউএ থাকা কালীন তৈরি করেছিলেন একটি চিড়িয়াখানাকলকাতাতে আসার সময় সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন সব পশুপাখিকলকাতা এসেই ইমারত তৈরির সাথে সমান্তরাল দৃষ্টি দিয়েই শুরু করলেন নিজের চিড়িয়াখানার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। কিছু বছরের চেষ্টায় তৈরিও করে ফেললেন চিড়িয়াখানাআব্দুল হালিম নামে লখনউএর এক লেখক তার লেখায় লিপিবদ্ধ করেছিলেন কলকাতার এই চিড়িয়াখানার বিবরণযদিও মুনিরা খাতুন গুরুদাস ভট্টাচার্য এই বইএর বাংলা অনুবাদ করেন তবে সেই বই আজ আর পাওয়া যায়না


আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই চিড়িয়াখানার কিছু বিবরণঃ

প্রাসাদের একটি অংশ নুর মঞ্জিল, যার সামনে লোহার বেড়া দিয়ে ঘেরা একটি লম্বাচওড়া পথপথের সামনে ঠিক মাঝ বরাবর একটি শ্বেতপাথরে বাঁধানো পুকুরসেই পুকুরে থাকত শুতুরমুর্গ , কিশরি ফিলমর্গে সারস, কায়া, বগলা, করকর চকর হাঁস এবং আরও নানা জাতের পাখি কছপ, হাতের ইশারায় জড় হত খাবার দেওয়ার সময়পুকুরের একধারে খাঁচায় থাকত চিতা বাঘ, পুকুরের অপরপারে রেলিং ঘেরা অংশে ছিল সারা বিশ্বের প্রায় ২০প্রজাতির বানরযারানাকি খাবার দেওয়ার সময় নেচেকুদে মজা দেখাত বলেই উল্লেখ আছে

শাহান শাহ্মঞ্জিলের সামনে ছিল সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান যা হল সাপের মহলমঞ্জিলের সামনের অংশে একটি বিরাট এবং গভীর জলাশয় যার চারপাশ পিছিল করে দাওয়া এবং সামনের অংশে ঝোঁকানো একটি কৃত্রিম পাহাড় যাতে অসংখ্য নালিআর এর মধেই রয়েছে হাজার হাজার সাপইউরোপীয়দের মতে সাপ সংরক্ষণ বা পোষার সবথেকে ভাল পথের সন্ধান দেন  ওয়াজিদ আলি শাহ্‌।

এছাড়া ছিলপিতল পিঞ্জরনামে পাখির ঘরকয়েকশত পাখি ছিল সেই পাখিরালয়েএছাড়া ছিল আফ্রিকার জিরাফ, বোগদাদি উট, হাতি, ভাল্লুকএদের সংগ্রহে বেহিসাবি অর্থ ব্যায় করেছেন নবাবএকবার একজোড়া রেশমপরা পায়রা কিনেছিলেন ২৪০০০ টাকাতে এবং একজোড়া সাদা ময়ূর কিনেছিলেন ১১০০০ টাকাতেএমনকি একজোড়া শকুন কিনলেন ৫০০০০ টাকাতে১৮৬৭ সালে বকেয়া টাকা মেটাতে সোনার পালঙ্ক গলিয়ে ফেললেনসেই সোনা দিয়ে মেটালেন বকেয়া অর্থএকজন পেনশন ভোগী হয়েও মাসে কয়েক হাজার টাকা খরচ করতেন ওয়াজিদ আলি শাহ্‌। চিড়িয়াখানায় মোট জন্তুর সংখ্যা ছিল ৮০০ এর অধিক


এই চিড়িয়াখানা সামলাতে গিয়ে শেষ জীবনে দেউলিয়া হয়ে গেলেন নবাবতার মৃত্যুর পর নিলামে উঠল তার সম্পত্তি বেশিরভাগই কিনে নিল চোরবাগানের মল্লিকরাচিড়িয়াখানা কি হয়াছিল জানা যায়নি, ধরে নেওয়া হয় নবাবের মৃত্যুর পর অবলুপ্তি ঘটে এই চিরিয়াখানারব্যারাকপুরের স্মৃতি যেমন বহন করছে আজকের আলিপুর তেমনি মেটিয়াবুরুজের স্মৃতি বহন করছে আজকের মার্বেল প্যালেস 


কলকাতার হারিয়ে যাওয়া দুটি চিড়িয়াখানাঃপর্বঃ ১(Two unknown zoo of kolkata:Part:1) ব্যারাকপুররের চিড়িয়াখানা (The Barrackpur Zoo): https://ojanakolkata.blogspot.com/2019/05/two-unknown-zoo-of-kolkatapart1.html

অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজ(ojana Kolkata face book page) https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-অজানা-কলকাতা-351064638888700/?modal=admin_todo_tour


অজানা কলকাতা টুইটার (ojana Kolkata in twitter) https://twitter.com/KolkataOjana?lang=en

অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour



1 comment: