সময়টা লর্ড
ওয়ারেন হেস্টিংসের, এইসময় থেকেই ভারতে ব্রিটিশদের খুঁটি সুদৃঢ় হতে থাকে।
হেস্টিংস ছিলেন একজন বিদ্যা
অনুরাগী ব্যক্তি। ভারতে আসার পর প্রাচ্য শিক্ষার বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন।
১৭৭৪ সালে তারই তত্ত্বাবধানে তৈরি হল কলকাতা সুপ্রিম কোর্ট। ইংরেজ সাহেবরা তো কাজ
পেলেনই সেই সাথে কাজ পেলেন অনেক বাঙালি সাধারন জনগন। কিন্তু গোল বাঁধল তো তখনই যখন
সাহেব আর বাঙ্গালীদের মধ্যে ভাষা বোঝার সমস্যা দেখা দিল। কারন সাহেবরা জানেনা
বাংলা আর ভারতে তখন ব্যাপক ভাবে ইংরাজি শিক্ষা শুরু হয়নি তাই ইংরাজি জানার প্রশ্নও
আসেনা। কিন্তু কাজ চালাতে গেলে তো উভয়কেই বাংলা ও ইংরাজি দুটো ভাষাই জানতে হবে।
১৭৭৮ সালে এই সমস্যার আংশিক সমাধান করলেন নাথানিয়াল ব্রাশী হ্যালহেড নামে একজন
ব্রিটিশ নাগরিক। ইংরাজরা যাতে বাংলা ভাষা সহজে শিখতে পারে তাই তিনি রচনা করলেন ‘
ইংরাজিতে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ এবং বাংলা ভাষা যাতে এদেশের সাহেবরা পড়ে বুঝতে
পারেন ও বাংলা ছাপার জন্য চার্লস উইলসনকে দিয়ে তৈরি করালেন বাংলা ছাপার অক্ষর। ও
প্রাচ্য সাহিত্যকে ব্রিটিশদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য চার্লস উইলসনকে দিয়ে
‘শ্রীমদ্ভাগবদগীতা’-এর ইংরাজি অনুবাদ করান।
এরপর হেস্টিংসের মূল উদেশ্য
হয়ে উঠল বাঙালিকে ইংরাজি শেখান যাতে তারা সাহেবদের সাথে সমান মর্যাদায় কাজ করতে
পারেন। কিন্তু কোন আশানরুপ উপায় না দেখে তিনি বিজ্ঞাপন দিলেন “ ইংরাজি ভাষার এমন
এক শব্দকোষ প্রকাশ করতে হবে যাতে এদেশের লোকেরা সহজে ইংরাজি শিক্ষা লাভ করতে পারে।
আর এইকাজ যে করতে পারবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।” এই বিজ্ঞাপন বুঝতে পেরে বাঙালিদের
মধ্যে ইংরাজি শিক্ষার প্রবল আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয়। কিন্তু এই স্বপ্ন হেস্টিংস তার
জামানায় পূর্ণ করতে পারেননি। অবশেষে ১৭৯৩ সালে প্রকাশিত হয় স্যার অ্যারন আপজনের
“ইংরাজি ও বাংলা ভোকাভুলারি” ১৭৯৭ সালে প্রকাশিত হয় জন মিলারের “শিক্ষাগুরু” ও
১৭৯৯ সালে হেনরি পিটস ফরস্টারের “ভোকাবুলারি”। এই তিন বই খুব উপযোগী হলেও
ফরস্টারের বইটিই সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় হয় বাঙালিদের কাছে। এইসকল বইপড়ে বাঙালি শব্দ
চয়ন করে ইংরাজি বলতে বা লিখতে পারত কিন্তু ইংরাজি ব্যাকরণের ব্যাবহার তারা জানত
না।
কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও
তিনজন বাঙালি কিন্তু অসাধারন ইংরাজি শিখে সাহেবদের মন জয় করেছিলেন। তারা হলেন
আইনজীবী রামনারায়ন মিশ্র এবং আনান্দরাম ও হেডক্লার্ক রামমোহন মজুমদার। হিকি তার
‘স্মৃতিকথা’-তে রামমোহন মজুমদারের নাম উল্লেখ করেছেন।
বাঙালি ইংরাজি ব্যাকরণ
শিখেছিল পাশ্চাত্য বাবস্থায় স্কুল স্থাপনের পর। বলবো সেই ইতিহাস “কলকাতাতে স্কুলের
বিকাশ” এই ব্লগে।
প্রথম বাংলা বই:
বাংলার প্রথম ছাপা
খবরের কাগজ হল “সমাচার দর্পণ” প্রকাশিত হত শ্রীরামপুর থেকে, এবং প্রকাশ করতেন
উইলিয়াম কেরি ও উইলিয়াম ওয়ার্ড। শ্রীরামপুরের মাহেশ থেকেই কলকাতাতে চলে আসেন বাংলা
বইয়ের পথিকৃৎ নগেন্দ্রানাথ বসু এর পূর্বপুরুষরা। থাকতে শুরু করেন শ্যামবাজারে।
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে ভুপেন বোস অ্যাভিনিউ ধরে মিত্র ক্যাফের এলেন এবার
মিত্র ক্যাফের উল্টো দিকে দেখতে পাবেন বৃন্দাবন পাল লেন, এই রাস্তায় ঢুকে আপনি
সোজা এগিয়ে গেলে বামদিকে প্রথম যে রাস্তাটা পরবে সেটার বর্তমান নাম বিশ্বকোষ লেন।
কিন্তু এই রাস্তার আগের নাম ছিল কাঁটাপুকুর বাই লেন। এখানেই থাকতেন নগেন্দ্রানাথ
বসু। জন্মঃ ৬জুলাই ১৮৬৬ সালে। মেধাবী নগেন্দ্রানাথ বসু ১৫-১৬ বছর বয়সেই যুক্ত হন
সাহিত্যচর্চার সাথে এবং দুটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন। মাত্র ১৮
বছর বয়সে শব্দেন্দু মহাকোষ নামে ইংরাজি থেকে বাংলা অভিধানের সম্পাদনার দায়িত্ব
গ্রহন করেন। কিন্তু সবথেকে অবিস্মরণীয় কৃতিত্ব হল বাংলা বিশ্বকোষ এর সম্পাদনা যা প্রথম বাঙ্গালা encyclopedia। এই বাংলা বিশ্বকোষ এর কাজ শুরু করেন রঙ্গলাল ও ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৮৫ সালে। ১৮৮৮ সালে নগেন্দ্রানাথ বসু ২২বছর বয়সে এই বিশ্বকোষের কাজ শুরু করেন। এরপর ২২ বছর খেটে প্রকাশ করেন বাংলা বিশ্বকোষের ২২টি খণ্ড। কাজ শেষ হয় আপ্রিল,১৯১১ সালে। ১৯৩৩সালে নগেন্দ্রানাথ বসু বাংলা বিশ্বকোষের সংস্করণের কাজ শুরু করেন কিন্তু ১৯৩৮ সালে তার মৃত্যুর জন্য দ্বিতীয় সংস্করণ ৪টি খণ্ডের পর থেমে যায়।
১৭ই মার্চ ১৯১৫ সালে একজন বাঙালির অসামান্য কাজকে সম্মান জানাতে কাঁটাপুকুর বাই লেনের নাম কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন করে দেয় বিশ্বকোষ লেন। সেই নাম আজও অপরিবর্তিত এবং এইখানে এখনও থাকেন নগেন্দ্রানাথ বসুর নাতি শম্ভুনাথ বসু ও তার পরিবার।
বইয়ের নামে রাস্তার নামকরনের প্রথম উদাহরণ কলকাতার এই “বিশ্বকোষ লেন”।
কলকাতাতে আরও একটি রাস্তার নাম বইয়ের নামে, হাজরা ল্যান্সডাউন ক্রসিঙের কাছে আছে “স্বর্ণলতা লেন” যার নামকরন হয় তারকনাথ গাঙ্গুলির উপন্যাস স্বর্ণলতা থেকে। যে শহরে বিশ্বের সবথেকে বড় ওপেন এয়ার বইমেলা হয় আমাদের শহরে আর এশিয়ার বৃহত্তম ওপেন এয়ার বুক মার্কেট আমাদের শহরে। এখানে যদি বইয়ের নামে রাস্তা না হয় তো কথায় হবে?
বইয়ের কথাত অনেক হল কিন্তু বই তো ছাপাতে হবে নাহলে লোকের হাতে হাতে যাবে কিকরে? সে বাবস্থাও হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে আর সেই কাজে বিশেষ ভুমিকা নিয়েছিল শ্রীরামপুর ত্রয়ী। বলবো সেকথা পরের পর্বে।
অজানা কলকাতা টুইটার (ojana Kolkata in twitter) https://twitter.com/KolkataOjana?lang=en
অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour
অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour
0 Comments:
Post a Comment