want to read this blog in english? click here
অন্ধকূপ মানে হল
অন্ধকূপ হত্যা। মনে পরছে স্কুলের ইতিহাস বইতে পড়া সিরাজের অন্ধকূপ হত্যার কথা?
কিন্তু এই অন্ধকুপের সাথেও জরিয়ে আছে কলকাতার ইতিহাস। আজও আমারা সেই জায়গা দিয়ে
রোজ হেঁটে যাই যেখানে দাঁড়িয়ে একদিন সিরাজউদ্দৌল্লা পরিচালনা করেছিল কলকাতা
আক্রমনের শেষ অধ্যায়।
আসুন শুরু করা
যাক সিরাজউদ্দৌল্লার রাজত্বের শুরু থেকে। ১৭৫৬খ্রীঃ মুর্শিদাবাদের মসনদে বসেন
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা। ঘোরতর ইংরেজ বিরোধী সিরাজ বিনা শুল্কে
ইংরেজদের ব্যাবসা করার অধিকার খর্বের চেষ্টা করেন। শুরু হল বিরোধ সিরাজ কোনভাবেই
আপস করতে রাজি নন। ৪ঠা জুলাই দখল করে নিলেন ইংরাজদের কাশিমবাজার কুঠি। তারপর প্রায়
৫০০০০ সৈন্য নিয়ে অগ্রসর হলেন কলকাতার দিকে। ১৬ই জুন ১৭৫৬ সিরাজের সৈন্য বাহিনী
এসে উপস্থিত হল কলকাতায়। বিশাল সৈন্য বহর দেখে মারাঠা ডিচের ইংরেজ সৈন্য ভয়ে পালাল
তবে “পেরিনস পয়েন্ট”- এ ইংরেজ নাবিকরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন কিন্তু নবাবের
সেনার কাছে বানের মুখে বালির বাঁধের মতো উড়েগেল কোম্পানির নৌবহর। অবশেষে নবাব এসে
দাঁড়ালেন ডালহৌসি স্কয়ারে। সামনে ফোর্ট উইলিয়াম। এতদিন কলকাতায় ইংরেজদের ব্যাবসা
করা সব অর্থ সোনা-দানা সবই আছে ফোর্ট উইলিয়ামের ভেতর। অর্থাৎ সেনাপতি রাজবল্লভের
ওপর হুকুম হল “চলো কেল্লা”।
কিন্তু
যার কারণে যুদ্ধ হল সে কই? ১১ই জুন ফোর্ট উইলিয়ামের প্রেসিডেন্ট ড্রেক ও অন্য
কর্মকর্তারা হিসাবের খাতাপত্র নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। অতএব এখন ইংরেজ নেতৃত্ব বলতে
হলওয়েল, আর আছে মাত্র ৫১৫জন ইংরেজ জনগন। যারমধ্যে ২৫০জন মাত্র সেনা বাকিসব নারী,
শিশু ও আম্যেচার। হলওয়েল বললেন যতো সোনাদানা আছে সব সমান ভাবে ভাগকরে দেওয়া হবে
কিন্তু যুদ্ধে লড়তে হবে, কিন্তু অবশেষে হারলেন সাহেবরা, হলওয়েল আত্মসমর্পণ করলেন। ২০শে জুন নবাব অধিগ্রহন করলেন ফোর্ট উইলিয়াম।
এতক্ষণে প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে কেল্লা। কিন্তু ১৪৬ জন জীবিত ইংরেজকে রাখবেন
কোথায়? যাদের মধ্যে নারী,পুরুষ, শিশু সকলেই আছেন। যতই হোক তারা এখন যুদ্ধবন্দি।
ঠিক হল তাদের রাখা হবে কেল্লার জেলে যাকে সাহেবরা বলত “ব্ল্যাক হোল”। ১৪৬জনকে
বন্দি করাহল ১৮ফুট লম্বা ও ১৪ফুট চওড়া
একটি কক্ষে। একেই জুন মাসের ভ্যাপসা গরম সাথে যুদ্ধের ক্লান্তি, আগুন, ধোঁয়া সব
মিলিয়ে দমবন্ধ করা ভয়ানক পরিবেশ ঐ ঘরের। পরদিন সকালে যখন ঐ ঘর খোলা হল দেখাগেল
বেঁচে আছে মাত্র ২৩জন।
এইঘটনা
আজও ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে “ অন্ধকূপ হত্যা” নামে যদিও এইনাম সাহেবদেরই দেওয়া।
কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে অনেক মতবিরোধ আছে। এই ঘটনায় মৃতদের শান্তির উদ্দ্যেশে হলওয়েল
আজকের বিবাদী বাগ ও এন এস রোড মাঝে তৈরি করলেন একটি মনুমেন্ট। যদিও রক্ষণাবেক্ষণের
অভাবে সেই মনুমেন্ট ভেঙ্গে পড়ে, পরে অবশ্য সেই মনুমেন্ট সরিয়ে দাওয়া হয়।
এরপর
কেটে গেছে অনেক বছর । ১৮৯৯সালে বড়লাট হয়ে
কলকাতা আসেন কার্জন। ইতিহাস অন্তপ্রান কার্জন ইংল্যান্ড-এ থাকতে পড়েছিলেন
১৭৫৬সালের ইতিহাস। কলকাতাতে এসেই তার নির্দেশে তৈরি হল পুরনো ফোর্ট উলিয়ামের
মানচিত্র এবং খুঁজে বের করলেন উল্লেখযোগ্য স্থান গুলি। দেওয়ালের অবস্থান চিহ্ন বোঝাতে বসালেন পিতলের পাত এবং শ্বেতপাথরের
ফলক।
ফিরে
আসুন আজকের দিনে, ধরুন ফেয়ারলি প্লেস দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন ইস্টার্ন রেলওয়ে এর অফিস
বাড়ির দেওয়ালের পাসে ফুটপাথে দেখতে পাবেন একটি পিতলের পাত যার ওপর জ্যামিতিক চিহ্ন
আঁকা, এবার তাকান ঠিক এর উল্টো দিকে ইস্টার্ন
রেলওয়ে এর অফিস বাড়ির দাওয়ালে শ্বেতপাথরের ফলোকে পরিষ্কার লেখা আছে ঐ স্থানটিই হল
পুরনো ফোর্ট উইলিয়ামের উত্তর-পশ্চিম সীমানা যেখান দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন তরুন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা ও তার সেনা।
ফোর্ট
উইলিয়ামের পূর্ব সীমা আজকের নেতাজি সুভাষ রোড, দক্ষিণ সীমা জেনারেল পোস্ট অফিস। জি
পি ও এর মধ্যে আজও দেখা যায় কিছু খিলান, যা কেল্লার ধ্বংসাবশেষ ও সিঁড়িতে দেখা যায়
কিছু পিতলের পাত যা পুরনো ফোর্ট উলিয়ামের দেওয়ালের অবস্থান চিহ্ন, সবই শ্বেতপাথরের
ফলোকে কার্জন লিখিয়ে রেখে গেছেন। হয়ত বুঝেছিলেন কলকাতার স্মৃতিশক্তি কম।এবার হেঁটে
যান জি পি ও এর উত্তর দিকে। জি পি ও এবং
কালেক্টরিয়েট বিল্ডিঙের মাঝখানে একটি সরু গলি সামনে লোহার গেট আর গেটের পাসে একটি
কামান যা ১৭৫৬এর যুদ্ধে ব্যাবহার হয়েছিল। এই হোলার গেটের পিছনে ছিল ব্ল্যাক হোল বা
অন্ধকূপ।
এবার
থেকে কোন দিন অফিস পাড়া দিয়ে হেঁটে গেলে একবার লক্ষ করে দেখবেন সেই যুদ্ধের স্মৃতি
চিহ্ন।
অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour
অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour
0 Comments:
Post a Comment