কলকাতাঃ কিভাবে তৈরি হল? (KOLKATA (CALCUTTA): HOW TO ESTABLISH?)

সুতানুটি, গোবিন্দপুর এবং কলিকাতার নামকরণ ও বাণিজ্যের ইতিহাস ( name and trade history of sutanuti, gobindopur and kolikata )

want to read this blog in English? click here

আমার   আগের কলম- কলিকাতা নামক স্থান বা জনপদ এর কথা বলেছি কিন্তু এই কলিকাতা বর্তমান কলকাতা নয়, বর্তমান কলকাতার একটি অংশ মাত্র। বর্তমান কলিকাতা সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলিকাতার মিলিত রূপ।
আসুন  জেনে  নেওয়া  যাক  তিনটি  জনপদ  এর  কিছু  ইতিহাসঃ

) সুতানুটি -  এই  অংশের  নামকরণ  নিয়ে  বিস্তর  মত  বিরোধ  আছে বর্তমান  উত্তর  কলকাতার  নিমতলা- জোড়াবাগান  অংশ  ছিল  তৎকালীন সুতানুটিবা  “চুথানুটি”  সাধারণ  ভাবে  বলা  হয়  সুতা এবং  নটীর  ব্যবসা  থেকে এই  অংশের  নাম  হয়  সুতানুটিআবা তিহাসিকরা  বলেছেন  জাহাঙ্গির, মানসিংহ, বড়িশার  সুবর্ণ  রায় চৌধুরিকে  কলকাতা  জায়গির  হিসাবে  দান করেন  এই  রায় চৌধুরি পরিবারের  আরাধ্য দেবতা  "শ্যামরায় এই রায়চৌধুরী  বাড়ির ঠাকুর মন্দিরের  সামনে  ছিল  এক  বিরাট  ছত্র,  এই  অংশে  প্রতিদিন  পুজার  শেষে  প্রসাদ বিতরণ  বা  লুট  হতো  এই  থেকে   
ছত্রলুট - সুতালুটি - সুতানটি - সুতানুটি
এই  অংশে  জোব  চারনক  প্রথম  বাণিজ্য কুঠি স্থাপন  করেন

) গোবিন্দপুর - তৎকালিন  গোবিন্দপুর  হলো  বর্তমান  ফোর্ট উইলিয়াম   তার  পার্শ্ববর্তী  অংশ  অনেকের  মতে  ভগবান  গোবিন্দ  জউ –এর নাম  অনুসারে  এই  অংশের  নাম  হয়  গোবিন্দপুর । তবে অপর এক দলের মতে রাজা বসন্ত রায়ের কর্মচারী গোবিন্দ দত্ত নামে এক ব্যক্তি স্বপ্ন দেখেন ভগবান গোবিন্দ জউ তাকে আদেশ করছেন “মাটি খোড়, টাকা পাবি। গোবিন্দ  দত্ত  কালিঘাটের  কাছে  তার পছন্দ মতো  জায়গা  খুড়ে  অনেক  টাকা  পেলেন। সেই থেকে জায়গার নাম হয় গোবিন্দপুর।

৩) কলিকাতা বা ডিহি কলিকাতা - এই অংশের নামকরণ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না, তবে এই অংশ সুবর্ণ রায় চৌধুরির জমিদারীর আওতায় ছিল যা মোগল বাদশাহ-র কাছ থেকে পাওয়া। এই অংশ হলো আজকের ডালহৌসি স্কোয়ার বা বি বা দি বাগ।

এই তিন জনপদের বাণিজ্যের ইতিহাসঃ

পূর্ব এশিয়াতে ইউরোপে বাণিজ্য করার জন্য সুবিধাজনক অবস্থান এবং হুগলি নদীতে বাণিজ্য বাজরার যাতায়াতের সুবিধা থাকার জন্য ষোড়শ শতাব্দিতে পর্তুগীজদের আগমন হয়। তারা হুগলী নদীর ওপর
অববাহিকার আদি সপ্তগ্রামে প্রথম বাণিজ্য কুঠির নির্মাণ করেন। কিন্তু নদীর গতি পরিবর্তন এবং বার বার বন্যার কারণে তারা নিজেদের ঘাটি নদীর পূর্ব দিকে সরিয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য হন সপ্তদশ শতাব্দির মাঝামাঝি নানা বাঙ্গালী ব্যবসায়ী পরিবার এবং মারোয়ারীর জগৎ শেঠ এই অংশে সুতো এবং সুতীর ব্যবসা করেন।
১৬২০ খ্রীষ্টাব্দে জগৎ শেঠ এবং বসাকদের সুতো, ছাপার কালি, লবণ, চুনের রমরমা ব্যবসা শুরু করে। এর পরে মিত্র, ঘোষ, মল্লিক, সেন, পরিবার সুতানুটি গ্রামে এসে ব্যবসা শুরু করেন। পর্তুগীজ এবং ডাচরা এই অংশে বাণিজ্য খুটি নির্মাণ করে প্রতিনিধির সাহায্যে ব্যবসা চালাতে থাকেতারা মূলত দ্রব সংগ্রহ করত,  গুদামে মজুত করতো এবং রপ্তানি করত।

১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রথম এলিজাবেথ এর কাছ থেকে রয়েল চার্টার পায়, তারা ভারতে এসে সুরাট এবং মাদ্রাজ বন্দর থেকে ব্যবসা শুরু করেন। ১৬৫৩ সালে সম্রাট শাহ সুজার কাছ থেকে বাংলাতে বাণিজ্য করবার জন্য পাটনা, ঢাকা, কাশিমবাজার, মালদা, রাজমহল প্রভৃতি স্থানে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণের অধিকার পায়। তারা হুগলি এবং  কাশিমবাজারে  বাণিজ্য  খুটি নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকে | ১৬৮৬ খ্রীষ্টাব্দে জোব চারনক একবার কলিকাতায় আসেন, তবে সুবেদার সায়েস্তা খানের কাছ থেকে বাধা পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন, পরে ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় এসে সুতানুটি অঞ্চলে ব্যবসা শুরু করেন।

১৬৯০ থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে বিবর্তনঃ

১৬৯০ খ্রীষ্টাব্দে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ হলেও ইংরেজদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়নি। ১৬৯৫ সালে কাঁচা বাড়ীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার এবং পাকা বাড়ী ছিল ৮ থেকে ১০টি। মোট জনসংখ্যা ছিলা ৪০০০ থেকে ৫০০০ এবং মোট জমির পরিমাণ ছিল ১৮৫০ বিঘা। মুষ্টিমেয় অধিবাসি ছিল ইংরেজ এবং বাকী স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ী এবং উপজাতি। কোলকাতার বহু পাড়ার নাম এসেছে এই উপজাতিদের ও ছোটো ব্যাবসায়ী শ্রেণির নাম থেকে । যেমন- কুমোরটুলি, কুলুটোলা, দরজী পাড়া প্রভৃতি।

১৬৯২ সালে জানুয়ারীতে চারনকের মৃত্যু হলে তার জামাই চার্লাস আইয়ার এবং অন্যান্য আধিকারিকরা ব্যবসা চালিয়ে যান। ১৬৯৮ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট আজম উন শান বাধ্য হন সুতানুটি, কলিকাতা এবং গোবিন্দপুরের সম্পূর্ণ জমিদারী ইংরেজদের প্রদান করতে।
স্যার গোল্ড সবরোর হাত ধরে ব্যবসার অভিমুখ ডিহি কলিকাতার দিকে আসে। ১৬৯৯ সালে ফোর্ট উইলিয়ামের কাজ শুরু হয়। ১৭০০ সালে ফারুকশিয়ারে ফরমান বলে বার্ষিক ৩০০০/- টাকার বিনিময়ে বাংলা, বিহার, ওড়িশায় ব্যবসা করার অধিকার পায় এবং লীজ হিসাবে পূর্ব এবং দক্ষিণ দিকের আরো এলাকা অধিকার পায় এবং আধুনিক বৃহত্তর কলকাতা সৃষ্টির সূচনা হয়।

কিন্তু কলকাতা নাম কীভবে এল? পড়ুন 

"কলকাতা" নামকরনের পিছনে বিতর্ক ( CONTROVERSY BEHIND THE "CALCUTTA" NOMINATION) https://ojanakolkata.blogspot.com/2019/04/how-did-name-of-calcutta-come.html




অজানা কলকাতা টুইটার (ojana Kolkata in twitter) https://twitter.com/KolkataOjana?lang=en

অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour



0 Comments:

Post a Comment