COFFEE HOUSE KOLKATA- কলকাতা কফি হাউস


COFFEE HOUSE KOLKATA- কলকাতা কফি হাউস




ফি হাউস, উত্তর কলকাতায় কলেজে পড়েছেন বা উত্তর কলকাতায় চাকরি করেছেন কিন্তু কখনও কফি হাউসে যাননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল । কিন্তু সৌভাগ্য বসত আমি কলকাতার কলেজে না পড়ে এবং কলকাতায় চাকরি না করেও অনেকবার কফি হাউস গিয়েছি কারণ আমার প্রিয় যায়গা কলেজস্ট্রীট। আর বিখ্যাত কফি হউস এই কলেজস্ট্রীতেই। কিন্তু আজকে এই বিষয়টা নিয়ে কেন লিখতে বসলাম? আসলে যারা কফি হউস-এ আসেন, সে ভারতীয় হোক বা বিদেশী সকলেই মনে করেন এটাই কলকাতার প্রথম কফি হাউস। কিন্তু আসলে তা নয়। তাই আসুন শুনেনি কফি হাউসের দীর্ঘদিনের পথ চলার কথা।

১৭৬২ সালের ২১শে জুন উইলিয়াম পার্কেস নামে এক সাহেব কোম্পানির কাছে আবেদন করলেন যে তিনি শহরের একটি প্রান্তে বাগান বাড়ি কিনেছেন এবং সেখানে তিনি আমদ প্রমদের জন্য একটি কফি রুম খুলতে চান। প্রস্তাবটি যথেষ্ট উত্তম ছিল কিন্তু ভয় ছিল অন্য যায়গায়। কোম্পানির জোয়ান ছেলে ছোকরা রা যদি আমদ প্রমদের জোয়ারে ভেসে জায় তাহলে কোম্পানির ব্যবসা মাথায় উঠবে। তাই একটি শর্তে অনুমতি পাওয়া যাবে সেটি হল অফিসের টাইম- এ এই কফি রুম বন্ধ রাখতে হবে। এই শর্ত মেনেই কফি রুম চালু হল এবং অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে উঠলো।
১৭৮০ সালে কোম্পানির এক ইংরেজ কর্মচারী তার বিবরনে লিখেছেন যে “খাবারের দাম খুব কম, এক ডিশ কফির দাম মাত্র এক সিক্কা টাকা। আর কিছু অতিরিক্ত নেওয়া হয় তার কারণ অন্য।” সেই অন্য কারণ হল যে সেই কফিরুমে থাকতো অঢেল ইংরাজি পেপার এবং বই।

কিন্তু অল্পবয়সীদের এতে মন ভরলনা। তার চাই আর যায়গা এবং আরো ব্যবস্থা। এই আবেদন থেকেই ১৭৮৮ সালে তৈরি হল ক্যলকাটা এক্সচেঞ্জ কফি হাউস, যার বর্তমান নাম রয়েল এক্সচেঞ্জ। এই কফি হাউসে একমাত্র কলকাতার কোম্পানির কর্মচারী, কর্মকর্তা এবং বনিকরাই প্রবেশ করতে পারবে এবং তার জন্য সকলকে সদস্য হতে হবে এবং চাঁদা মাসিক ৪ টকা। এখানে কফি, খাবার, আমদ প্রমদের সাথে মজুত ছিল কলকাতা, লন্ডন এবং মাদ্রাজের সমস্ত ইংরাজি কাগজ এবং রাজনৈতিক খবরের একাধিক পত্রিকা। শুধু গল্প আর খাওয়েই নয় এই কফি হাউসে কফির কাপে চলত চরম বিতর্ক। যে মেজাজ আজও বজায় আছে। কিন্তু সুখের সময়ে হটাত ই খারাপ খাবর ঘনিয়ে এল। একদিন মালিক ঠিক করলেন তিনি এই কফি হাউস বিক্রি করে দেবেন কারণ আড্ডা জমলেও ব্যবসা ঠিক জমছে না তাই বিক্রিয় করাই শ্রেয়। কিন্তু খরিদ্দাররা বেঁকে বসলেন। বিক্রি করা যাবেনা এই কফি হাউস। ঠিক হল কফিহাউস বাঁচাতে লটারি হবে ঠিক হল, টিকিটের দাম থাকবে  ১০০ টাকা এবং ১৬০০০ টিকিট থাকবে,। কিন্তু লটারি করে এই কফি হাউস বাঁচানো গেছিল কিনা জানা যায়নি। কোন নথিতেও উল্লেখ নেই।

ঠিক এই সময়ে লন্ডনে এক প্রকারের কফিহাউস ছিল যার নাম ‘জেরুজালেম কফি হাউস’ ১৮৮৮ সাল অবধি টিকে ছিল এই সংস্থা। কবি কিউপারের পিতৃ নিবাস “কিউপার কোর্ট”-এ ছিল এই কফি হাউস টি। ভারত ফেরত নাবিক, কোম্পানির কর্মকর্তাদের মুল আড্ডা ক্ষেত্র ছিল এই যায়গা। ভারতের গল্প শুনতে অনেক জোয়ান ছেলের সমাগম হত। হিকি ভারতে আসার আগে এখানেই শুনেছিলেন ভারতের কথা।

১৭৯০ সালে জন ম্যাকডোনাল্ড নামে এক ব্যক্তি কলকাতায় পা দিয়েই উপলব্ধি করলেন জেরুজালেমের মাহাত্য। তিনিও একটি বাড়ি কিনলেন ডালহৌসি স্কয়ারে এবং জেরুজালেম কফি হাউসের আদলে তৈরি করলেন একটি কফি হাউস। কফিহাউসটির অবস্থান ছিল বর্তমানে কাউন্সিল হাউস স্ট্রীট যেখানে মিশেছে সেখানে ছিল এই কফি হাউস টি কিন্তু ব্যবসা ঠিক জমেনি। ফলে একদিন লর্ড ডালহৌসি ম্যাকডোনাল্ড-এর কাছ থেকে বাড়িটি ভাড়া নিলেন কারণ সিভিলিয়ানদের জন্য কলেজ তৈরি করবেন। ১৮০০ সালে সেই কফি হাউস উঠে গিয়ে তৈরি হল ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ।

আবার তিন দশক পর ১৮৩৬ সালে কফি হাউস প্রেমীদের জন্য সুখবর এল Alexender’s east india magazine এ খাবর প্রকাশিত হল যে জেরুজালেম কফিহাউসের মত একটি নতুন কফিরুম খুলবে কলকাতায়। সেই সাথে সেখানে বিভিন্ন জায়গার কাগজ, জাহাজ আশা যাওয়ার খাবর এবং লন্ডনের জন্য ডাকের থলি ওখানেই বাধা হবে।
এই রকম সুবিধা যুক্ত হোটেল তখন একটাই ছিল না কলকাতায়। লন্ডন হাউসে তৈরি হল স্পেন্সাস হোটেল যেটি ছিল বর্তমানের হেস্টিংস স্ট্রিট এবং গভরমেন্ট প্লেস ওয়েস্ট এর সংযোগ স্থলে। স্বাধীনতার পর সেটি তৈরি হয় কেন্দ্রীয় সরকারের ট্রেজারি অফিস এবং বর্তমানে সেটি আয়কর দপ্তরের অফিস।

ঠিক একি রকম সুবিধা যুক্ত হোটেল তৈরি হল কলকাতায় যেটির নাম ছিল অকল্যান্ড হোটেল। ১৮৫৮ সালে শুরু হয় এই হোটেল। এখানে ছিল জেরুজালেম কফি রুম, পড়ার আলাদা ঘর, আমোদ-প্রমোদের জন্য আলাদা ঘর এবং কালচারাল অনুস্থানের জন্য আলাদা ঘর। কিছু বছর পর হোটেলের নাম পরিবর্তন হয়ে হল নীল উইলসন হোটেল। যুক্ত হল রাত্রি যাপনের সুবন্দোবস্ত। এরও কিছু বছর পর জেরুজালেম কফি রুমের চাহিদা কমে যাওয়ায় উঠে যায় কফি রুম। এর পর অনেক হাত বদল এবং পরিবর্তনের পর সেই হোটেল আজও টিকে আছে গ্রেট ইস্টান হোটেল নামে।

আর শেষে আসি আজকে যে কফি হাউস দেখেন তার কথায়। এই কফি হাউসটি আজকের যায়গায় প্রথম ত্থেকে ছিলনা। ১৮৬৭ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতার  আলবার্ট হল-এ প্রথম কফিহাউস টি প্রতিষ্ঠা হয়। এইসময়ে এতি মুলত ছিল গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আড্ডার যায়গা।    ১৯৪২ সালে কফি বোর্ড গঠন হওয়ার পড়ে যৌথ ভাবে এই কফিহউস চলতে থাকে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পড়ে এই কফিহউসের নাম হয় INDIAN COFFEE HOUSE. ১৯৫৮ সালে কতৃপক্ষ এই কফি হউস বন্ধ করে দিতে চায় কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপকদের হস্তক্ষেপে এবং অনুরোধে কফি হাউস আবার নতুন করে বর্তমান যায়গায় চালু হয়। এর পর নানা বাধা বিপত্তি এসেছে কিন্তু কফি হাউস তার অবস্থানেই আছে।

এখনকার যুগের ঝাঁ চকচকে কফি শপের কাছে জৌলুস ফিকে হয়ে গেলেও কফি হাউসের আড্ডা, চাহিদা, আমেজ প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে থাকবে।  

0 Comments:

Post a Comment