পাথুরিঘাটা থেকে জোড়াসাঁকো- ঠাকুরবাড়ি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস :
কলকাতাতে ইংরেজরা আসার
আগে এসেছিল ডাচ, পর্তুগীজ বণিকরা, আগেই বলেছি সেইকথা। এই ডাচ, পর্তুগীজদের আসার
আগেথেকেই বলতে গেলে মুঘল আমল থেকেই কলকাতায় ব্যাবসা করছে কলকাতার জমিদার সুবর্ণ
রায়চৌধুরির পরিবার। এরপর পর্তুগীজদের সমসাময়িক কলকাতায় এসে ব্যাবসা শুরু করেন শেঠ
ও বসাকরা। কলকাতার পুরনো বড়লোক বলতে এদেরকেই বোঝান হয়।
এই শেঠ, বসসাকদের সময়
কলকাতায় কাজের খোঁজে আসেন পঞ্চানন কুশারি নামে এক ব্যক্তি। তিনি জাতে বামুন ছিলেন
বলে সসবাই তাঁকে ঠাকুর বলে ডাকত। তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজী কারবারের
সাথে যুক্ত হন। তার মূল কাজ ছিল জাহাজ থেকে মাল ওঠানো এবং নামানো। কাজে যুক্ত
থাকার সময় জাহজের ক্যাপ্টেনরাও তাঁকে ঠাকুর বলে ডাকত সেই থেকে তার উপাধি হয় ঠাকুর।
পঞ্চাননের জ্যেষ্ঠ পুত্র
জয়রাম ঠাকুর ১৭০৪-১৭০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত
কলকাতা জরিপের কাজে আশা বেনজামিন বাউচার সাহেবের অধীনে কাজ নেনে এবং বেশ
কিছু টাকা রজগার করেন। এবং পঞ্চাননের কনিষ্ঠ পুত্রও কোম্পানির অধীনে কাজ করে বেশ
ধনশালী হয়ে ওঠেন। জয়রামের পুত্র দর্পনারায়ন ঠাকুর প্রথমে ফরাসি ও পরে ইংরেজ
কোম্পানিতে চাকরি করে অনেক মূলধন রোজগার করেন এবং তাঁর অগ্রজ নীলমণি ঠাকুরের সাথে
মিলে ব্যাবসা শুরু করেন ও অল্প সময়ের মধ্যেই কয়েক লক্ষাধিক টাকার মালিক হয়ে যান।
এইসময় দর্পনারায়ন ঠাকুরের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা হয় পাথুরিঘাটা ঠাকুরবাড়ি।
পলাশীর যুদ্ধের পর
মীরজাফর কতৃক যে কলকাতা ধ্বংসের যে ক্ষতিপূরণ প্রদান করাহয় তার কিছু অংশ পান
নীলমণি ঠাকুর। ঠিক এর পরের বছর নীলমণি ঠাকুর কোম্পানির দেওয়ান পদে নিযুক্ত হন এবং
রাজস্ব আদায়ের নতুন বন্দোবস্ত করেন। কোম্পানি তার এই কাজে খুশি হয়ে তাঁকে ওড়িশার
কালেক্টরের সেরেস্তাদার পদে তাঁকে নিযুক্ত করেন এবং এইকাজ করে নীলমণি প্রভূত অর্থ
উপার্জন করেছিলেন।
কিন্তু নীলমণি এবং
দর্পনারায়ন ঠাকুরের মধ্যে বিষয় সম্পত্তির ভাগ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে নীলমণি
ঠাকুর ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পাথুরিঘাটার
ঠাকুর বাড়ির দাবি ছেড়ে দেন এবং বৈষ্ণবচরন শেঠের কাজথকে ১বিঘা জমি নিয়ে ১৭৮৪ সালের
জুন মাসে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পত্তন করেন। এই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি-ই পরবর্তী কালে
এদেশের অগ্রগতির প্রতীক হয়ে ওঠে।
বর্তমানে এই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি মিউজিয়াম বা সংগ্রহসশালায় রুপান্তরিত করা হয়েছে। এখানে গেলে দেখতে পাবেন ঠাকুরবাড়ির সদসসদের সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যাবহৃত দ্রব্য সামগ্রি।
পাথুরিঘাটার ঠাকুর
পরিবারের দর্পনারায়ন ঠাকুরের ছেলে গোপীমোহন ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র প্রসন্নকুমার
ঠাকুর(১৮০১-১৮৬৮) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য ৩ লক্ষ টাকা দান করেন এবং
‘টেগোর ল’লেকচার’- এর প্রবর্তন করেন। প্রসন্নকুমারের একমাত্র পুত্র
জ্ঞানেন্দ্রমোহন খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহন করলে তিনি তাঁর পুত্রকে ত্যজ্য পুত্র করেন,
এবং তাঁর ভাই হরকুমার ঠাকুরের ছোটছেলে যতীন্দ্রমোহনকে দত্তক নেন। এই
যতীন্দ্রমোহনের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হন তাঁর ভাই শৌরীন্দ্রমোহনের পুত্র
প্রদ্যুত কুমার ঠাকুর।
সামনের দিন বলবো একজনের
গল্প বেশ ইন্টারেস্টিং। অপেক্ষা করুন।
Jorasanko Thakur Bari
Address: Ganesh Talkies, 267, Rabindra Sarani, Singhi Bagan, Jorasanko, Kolkata, West Bengal 700007
google map link : https://goo.gl/maps/BsrG57y4r5sjXpYb9
0 Comments:
Post a Comment