সূচনাপর্ব (The introduction)
কলকাতা দ্যা সিটি অফ জয়, এই নামেই আমরা আমাদের শহর তিলত্তমাকে জানি। কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক কলকাতাকে সিটি অফ প্যালেস বলেও অভিহিত করেছেন। কিন্তু এই কলকাতা তৈরি হল কেমন করে? ১৬৯০ সালের ২৪শে অগাস্ট জোব চারনক ই কি তবে কলকাতা তৈরি করেছিল? উত্তর হল না। কলকাতার ইতিহাস আরও পুরনো, আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই ইতিহাস।
কলকাতার ইতিহাস জানতে গেলে জানতে হবে দক্ষিণবঙ্গ-র ইতিহাস যা কিনা ২০০০ বছরের বেশি পুরনো।
খ্রিস্টপূর্ব ৮০০-৯০০ সালের মধ্যে লেখা হয় মহাভারত যা সেইসময় জয়সংহিতা নামে পরিচিত ছিল। এই মহাভারত-এ উল্লেখ আছে যুধিষ্ঠির যেসময় রাজসুয়া যজ্ঞ করছেন ভিম সেইসময় তাম্রলিপ্ত-তে এসে সেখানকার স্থানীয় রাজার সাথে যুদ্ধ করেন। এই তাম্রলিপ্ত বর্তমান সময়ে মেদিনীপুর জেলার তমলুক। এবং এই তমলুক এর নিকটবর্তি গনগনইডাঙা নামক স্থানে ভিমের সাথে বকাসুরের যুদ্ধ হওয়ার উল্লেখ আছে। তাই কম হলেও মেদিনীপুর-এর অনেক স্থানে ভিম-এর পূজা হয়।
এরপর আসাযাক ৫০০ খ্রিস্টাব্দতে, এইসময় বরাহমিহির-এর লেখাতে সমতট নামক একটি স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়। অবস্থান বিচার করলে সেইস্থানের অবস্থান হয় বর্তমান দক্ষিণেশ্বর থেকে বেহালা পর্যন্ত। এরপর ৫১৭ খ্রিস্টাব্দতে ভারতে আসেন চিনা পরিব্রাজক হিউ–এন-সাং সমগ্র গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলকে ৫টি ভাগে ভাগ করেছেন, উত্তরে পৌণ্ড্র, উত্তরপূর্বে কামরূপ, পূর্বে সমতট, দক্ষিণ-পশ্চিমে তাম্রলিপ্ত/ তাম্রলিপ্ত বন্দর, পশ্চিমে কর্ণসুবর্ণ যেখানে শশাঙ্ক রাজত্ব করেছেন। এবং এই অংশ এর উল্লেখ আছে চন্দ্রকেতুগড়ের ইতিহাসে যা দে-গঙ্গার ইতিহাস নামেও পরিচিত।
চন্দ্রকেতুগড় গুপ্ত যুগের সমাসাময়িক এবং এইসময় যে বর্তমান কলকাতাতে জন বসতি ছিল তার প্রমান পাওয়া যায় বর্তমান কালীঘাট –এর কাছে পাওয়া গুপ্ত যুগের মুদ্রা থেকে।
শুশুনিয়া পাহাড়ে (জোন্দ্রাতে) যে শিলালিপি পাওয়া গেছে সেটা চন্দ্র রাজা সিংহ বর্মণের শিলালিপি নামে পরিচিত যেটাকে বাংলা ভাষার আদিরূপ বলা হয়। এই সময় থেকেই দক্ষিণবঙ্গে আর্য এবং অনার্য সংস্কৃতির মিলন ঘটতে থাকে। বাঙ্গালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা আর্য এবং অনার্য সংস্কৃতির মিশ্রণ।
এবার ফিরে আসি কলকাতার ইতিহাসে, আমারা জানি যে কলকাতার আগের নাম ছিল ক্যালকাটা, ২০০১ সালের ১লা জানুয়ারী নাম সরকারি ভাবে হয় কলকাতা।এর পরেই সাবর্ণ চৌধুরি-র পরিবার এবং ৯জন বিশিষ্ট মানুষ কলকাতা হাইকোর্ট-এ মামলা করে যে জোব চারনক কোনভাবেই কলকাতার সৃষ্টিকর্তা নন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিমাই সদন বসু এবং ৫জন ঐতিহাসিক-এর কমিটি যে রিপোর্ট পেশ করেন তার অপর ভিত্তি করে ১৬ই মে ২০০৩ সালে ঐতিহাসিক রায় দান হয়-“জোব চারনক কলকাতার স্রষ্টা নন” যা বদলে দেয় কলকাতার ইতিহাস এবং সামনে আসে আসল ইতিহাস।
এতক্ষণ যা বলেছি তাতো রিপোর্টে ছিলই এবং আরও ছিল যে জোব চারনক-এর প্রায় ৩০০ বছর আগেও কলকাতাতে জন বসতির উল্লেখ পাওয়া যায়।
কলিকাতা, বারুইপুর, চিতপুর, কালীঘাট, প্রভৃতি স্থান এর কথা বিপ্রদাস রচিত মনসামঙ্গল কাব্যতে ৯ম অধ্যায়ে উল্লেখ আছে যা লেখা হয়েছিল ১৫শতাব্দিতে। তবে এর আগে ১৩শতাব্দিতে কনা হরি দত্ত লিখেছিলেন তবে এরো পরে আরও ৪-৫ জন মনসা মঙ্গল কাব্য লিখলেন, সব কটাতেই কলিকাতার উল্লেখ আছে এবং একটি বিশিষ্ট জনপদ।
তবে বর্তমান কলকাতা এবং কলিকাতা এই দুটো আলাদা আসলে সেসময় কলিকাতা, গোবিন্দপুর এবং সুতানুটি এই ৩টি জনপদ নিয়ে জোব চারনক সূচনা করলেন বৃহত্তর কলকাতার।
এই ৩টি গ্রাম এর ইতিহাস কিন্তু মোঘল আমলের। পড়ুন সেই ইতিহাস
সুতানুটি, গোবিন্দপুর এবং কলিকাতার নামকরণ ও বাণিজ্যের ইতিহাস ( name and trade history of sutanuti, gobindopur and kolikata ) https://ojanakolkata.blogspot.com/2019/04/name-and-trade-history-of-three-famous.html
অজানা কলকাতা টুইটার (ojana Kolkata in twitter) https://twitter.com/KolkataOjana?lang=en
অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour
অজানা কলকাতা ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/OJANA-Kolkata-351064638888700/?modal=admin_todo_tour
0 Comments:
Post a Comment