ব্রিটিশ যুগের সৎ বড়লোক- রতন সরকার এবং শোভারাম বসাক (Most honest rich men in british kolkata:Ratan Sarkar and Shobram Basak)


অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে অর্থাৎ গোবিন্দরামের প্রায় সমসাময়িক আরও দুজন ধনী ব্যক্তির কথা শোনা যায়। তারা হলেন রতন সরকার এবং শোভারাম বসাক।
রতন সরকার পরিচিত ছিলেন রাতু সরকার নামে। কলকাতায় আসার পর রতন সরকার তৎকালীন সম্ভ্রন্ত ব্যক্তি নন্দরামের আশ্রিত হিসাবে থাকতে শুরু করেন এবং তিনি জাতিতে ছিলেন ধোপা। কথিত আছে ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘ফ্যালকন’ নামে একটি জাহাজ কলকাতায় এসে পৌছায়। সেই জাহাজের ক্যাপ্টেন মিস্টার স্ট্যাফর্ড নন্দরামের কাছে একজন “ধুবাস” বা দোভাষী চেয়ে পাঠান। কিন্তু নন্দরাম বোঝেন যে ক্যাপ্টেন হয়ত ধোপার খোঁজ করছেননন্দরান রতন সরকারকে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু চতুর নন্দরাম ফিরে আসেননি, কোনমতে কাজ চালিয়ে দেন। ফলে ইংরাজ সহচর্জে বেশ কিছু টাকা উপার্জন করেন। আবার কথিত আছে যে রতন সরকার ইংরেজদের কাছে মেয়ে সরবরাহ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন।

কিন্তু কলকাতার বড়লোক এই বিষয় নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের এক অংশের মতে রতন সরকার কে নন্দরাম ক্যাপ্টেন মিস্টার স্ট্যাফর্ড-এর কাছে পাঠাননি, তাঁকে পাঠিয়ে ছিলেন পোস্তার নকু ধর বা লক্ষ্মীকান্ত ধর। পরে অবশ্য এই ভুল ভাঙ্গে কারণ নকু ধর অনেক পরের সময়ের লোক। নকু ধর লর্ড ক্লাইভ এবং পরবর্তী অন্যান্য গভর্নরদের বেনিয়ান হিসাবে কাজ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন। এই নকু ধরই পোস্তার রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। নকু ধরের দৌহিত্র ও উত্তরাধিকারী সুখময় রায় তীর্থযাত্রীদের সুবিধার জন্য উলুবেড়িয়া থেকে পুরী পর্যন্ত পাকা রাস্তা তৈরি করে দেন।

রতন সরকারের নামেও কলকাতায় দুটি রাস্তা আছে। রতন সরকার গার্ডেন স্ট্রিট যা মাথা ঘষা গলি নামে পরিচিত। এবং কলুটোলার রতু সরকার লেন।



এবার আসি শোভারাম বসাক-এর কথায়। শোভারাম বসাক ছিলেন জাতিতে তন্তুবায়। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে উঠে আসেন সপ্তগ্রামের হলদিপুরে। হলদিপুরে থাকা কালীন তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সুতো এবং কাপরের ব্যাবসা শুরু করেন এবং অল্প সময়তেই কোটিপতি হয়ে ওঠেন। ব্যাবসা ফুলেফেপে ওঠার পরে তিনি চলে আসেন কলকাতায় এবং শেঠদের বাড়ির কাছে তিনি নিজের বসত বাড়ি তৈরি করেন ও সেখানে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। গোবিন্দপুরে ইংরাজরা নতুন দুর্গ নির্মাণ শুরু হলে তিনি উঠে আসেন বড়বাজার অঞ্চলে। বড়বাজারে তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তাটাই আজকের শোভারাম বসাক স্ট্রীট। শোভারাম বসাক নিজের নতুন বাড়ির পশ্চিমে গঙ্গার তীরে নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং জগন্নাথদেবকে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন। ওই মন্দিরের পাশে তিনি স্নানের জন্য ঘাট তৈরি করেন। সেই ঘাটই আজকে জগন্নাথ ঘাট নামে পরিচিত। ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে শোভারাম বসাক কলকাতাতেই মারা যান।

আজ এই অবধি সামনের দিন আবার আসব কোন পরিবারের গল্প নিয়ে।

0 Comments:

Post a Comment